চট্টগ্রাম বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

সবার নজর কাড়ছে ছয় রাজ ধনেশ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

গত নয় মাসে পাচারকালে উদ্ধার হওয়া ছয় রাজ ধনেশ এখন চিড়িয়াখানার বাসিন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ অক্টোবর, ২০২৩ | ১:০০ অপরাহ্ণ

তিনটি পাখি শক্ত লম্বা বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে খাবার খাচ্ছে। এর পাশেই আরো দুইটি পাখি দাঁড়িয়ে শরীরের ভেজা পালকগুলো শুকানোর চেষ্টা করছে। বাকি পাখিটি একটি খাঁচার ভিতরে ঢুকে বসে আছে। এক খাঁচায় এমন বড় আকৃতির ছয়টি চটপটে পাখি নজর কাড়ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের। সুন্দর এ পাখিগুলোর নাম ‘রাজ ধনেশ’।  পৃথিবী থেকে প্রায় বিপন্ন জাতের এ পাখিগুলো এখন আর প্রকৃতিতে দেখা যায় না বললেই চলে। পাচারসহ বিভিন্ন কারণে হারিয়ে যাচ্ছে রাজ ধনেশ পাখি। যে কারণে অনেকের কাছেও বেশ অচেনা পাখিটি।

 

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বিপন্ন জাতের এ ছয়টি পাখি চলতি বছর চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলা থেকে পাচারকালে উদ্ধার করা হয়েছে।  তারমধ্যে গত ২৬ মে বাঁশখালী উপজেলার গুনাগরি বাজারে একটি সিএনজি ট্যাক্সি থেকে চারটি রাজ ধনেশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর কিছুদিন পর আবারো চন্দনাইশ থেকে মধ্যরাতে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহন থেকে আরো দুটি ধনেশ পাখি উদ্ধার করে চন্দনাইশ থানা পুলিশ। পাচারকালে উদ্ধার করা সেই পাখিগুলোর এখন নিরাপদ আশ্রয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার খাঁচা। আনন্দ দিচ্ছে ঘুরতে আসা প্রাণী প্রেমীদের।

 

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, রাজ ধনেশ পাখিগুলো বিলুপ্ত প্রায় তালিকাভুক্ত। এ পাখিগুলো অবৈধভাবে পাচার করা হয় অর্থের বিনিময়ে। তেমনি চলতি বছর পাচারকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছয়টি রাজ ধনেশ পাখি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দেয়া হয়েছে। এ মুহূর্তে সেই ছয়টি পাখিসহ চিড়িয়াখানার আরো দুইটি ধনেশ পাখিসহ মোট আটটি রয়েছে। উদ্ধারের ছয়টি পাখির মধ্যে চারটি বাচ্চা ছিল। এ পাখি খাবার হিসেবে মূলত ফল খেয়ে থাকে। যেহেতু পাখিগুলো ছোট আর তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অভাব তাই চাইলেই পাখিগুলো ছাড়া যাচ্ছে না। ছেড়ে দিলে খোলা পরিবেশে মানাতে না পারলে মারা যেতে পারে কিংবা আবারো পাচারকারীর হাতে পড়তে পারে। যে কারণে এখনো তাদের জন্য চিড়িয়াখানার খাঁচাই নিরাপদ। যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় বাইরের প্রকৃতিক পরিবেশের সাথে মিশতে পারবে তাহলে একসময় ছেড়ে দেয়া হবে।

 

জানা যায়, একটি রাজ ধনেশের দাম এক থেকে দুই লাখ টাকার বেশি। এসব পাখি কিছু সৌখিন মানুষ খাঁচায় পালন করে থাকে। মূলত তারাই পাচারকারীদের থেকে কিনে থাকে।

 

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অভিযান) সুদীপ্ত সরকার জানান, চলতি বছর ধনেশ পাখি পাচারকালে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের ছয় মাস করে জেলও দেয়া হয়েছে। মূলত আলীকদম থেকে চকরিয়া-বাঁশখালী, থানচি-বান্দরবান-কাপ্তাই-রাঙ্গুনিয়া-রাউজান, চকরিয়া-চট্টগ্রাম এ তিন রুটে বিপন্ন প্রাণী দীর্ঘদিন ধরে পাচার হয়ে আসছে। পরে এসব প্রাণীগুলো সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যায়। এ কারণে এসব রুটে চেকপোস্ট রয়েছে। যেখানে প্রায় অভিযান চালাতে হয়। 

 

বিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির ধনেশ রয়েছে। তবে চট্টগ্রামে পাচারকালে যে পাখি উদ্ধার করা হয়েছে তা রাজ ধনেশ। সাধারণত একটি রাজ ধনেশ চার কেজি পর্যন্ত হয়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধনেশ। পাখিটি এখন বিপন্ন। চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য অঞ্চলে কিছু ধনেশ এখনো আছে। তবে সেগুলো শিকারীর হাতে পড়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ পাখিগুলো এক থেকে দুই লাখ টাকার বেশি বিক্রি করা হয়।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট