চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

অপরিকল্পিত আবাসনে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রকম জটিলতা

লামায় কৃষিজমিতে বাড়ছে বসতি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা-আলীকদম

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ৬:৫৬ অপরাহ্ণ

লামা উপজেলায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে একের পর এক বসতঘর। এতে দিনদিন কমছে কৃষিজমি।

সরেজমিনে দেখা যায়, লামা পৌরসভার মধুঝিরি বিল, বড় নুনারবিল, চেয়ারম্যান পাড়া বিল, নয়াপাড়া বিল, কলেজগেইট এলাকায় কৃষিজমি ভরাট করে জনবসতি গড়ে উঠেছে। নতুন করে ছাগলখাইয়া বিল, সাবেক বিলছড়ি বিল, কলিঙ্গাবিল, লামামুখ, শিলেরতুয়া ও হরিণঝিরি বিলে কৃষিজমি আবাসনখাতে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জায়গার মালিকরা নিজেদের জমি ছোট ছোট ওয়াল দিয়ে ঘিরে খন্ড খন্ড করে বসতির জন্য বিক্রি করছে। এতে দ্রুত কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। কোথাও ফসলি জমি ভরাট করে, কোথাও জলাশয় ভরাট করে, কোথাও পাহাড় কেটে, আবার কোথাও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও চলাচলের রাস্তার জন্য জায়গা না ছাড়াসহ অন্যান্য নিয়ম না মেনে একের পর এক আবাসন তৈরি হওয়ায় জনজীবন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

যা ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একদিকে উন্নয়ন, অন্যদিকে সমতল জমিতে বিভিন্ন এলাকা হতে আগত মানুষের বসতি স্থাপনের কারণে এখানে প্রতিবছর শতশত নতুন বসতি গড়ে উঠছে। এসব বসতির বেশিরভাগই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠার কারণে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

লামা পৌরসভার বড় নুনারবিল পাড়া পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা জানান, আবাসনের কারণে কৃষিজমি দিনদিন কমছে। এলাকার বাসিন্দা মংবাই মার্মা, মো. সুমন বলেন, পাড়ায় ঢোকার একমাত্র রাস্তাটি এত সরু হয়ে গেছে যে, একটি রিকশা বা টমটম ঢুকতে কষ্ট হয়। কোন বিপদে ফায়ার সার্ভিস ও এম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না। ইতিমধ্যে বড় নুনারবিলের বড় ফসলের মাঠটিতে জনবসতি গড়ে উঠেছে।

গত আগস্ট মাসে লামায় ভয়াবহ বন্যায় যখন মানুষ নিজ নিজ ঘরে আটকে যায়, তখন রাস্তা না থাকায় তাদের উদ্ধারে পাড়ায় নৌকা পর্যন্ত ঢুকানো যায়নি। শুধু ঘরবাড়ি নির্মাণ করলে কোন আপত্তি ছিল না। সমস্যা হচ্ছে, কেউ পৌরসভার আবাসন নিয়ম-নীতি মানে না। নিজের জায়গার চারপাশে জায়গা ছেড়ে ঘর তৈরি করা, চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত রাখার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া জলাশয় ভরাট সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু আসলে কিছুই মানা হয় না।

লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, বাজারের একমাত্র পুকুরটি দূষণ আর দখলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পুকুরটি এখন ব্যবহার করা যায় না। এমনকি বাজারে আগুন লাগলে পানি পাওয়া যায় না। বাজারের একমাত্র পুকুরটি খনন করা জরুরি।

লামা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন অফিসার সাফায়েত হোসেন বলেন, এখানে বড় বড় স্থাপনা, বসতবাড়ি কিংবা শপিং মল তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোথাও ফায়ার সেফটিগুলো মানার বালাই নেই। এককথায় বেশিরভাগই অপরিকল্পিত আবাসন। অপরিকল্পিত আবাসন নির্মাণ হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার সময় কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। তাই ভবনগুলো যেন পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়, সেদিকে নজরদারি বৃদ্ধি করা দরকার।

লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম বলেন, বিল্ডিং স্থাপন করতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন থাকে। যারা বিল্ডিং করার অনুমতি চান, আমরা তাদেরকে সেসব নিয়ম মেনে করার জন্য অনুমতি দিই। কিন্তু অনেকেই নিয়ম-কানুন মানতে চান না। আমাদের পরিদর্শনকালে এসব যদি ধরা পড়ে, আমরা ব্যবস্থা নিই।

পূর্বকোণ/সাফা

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট