চট্টগ্রাম রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় টানা বর্ষণে দুর্ভোগ, জলাবদ্ধতা

পূর্বকোণ ডেস্ক

৬ আগস্ট, ২০২৩ | ১:১৩ অপরাহ্ণ

টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেড়েছে জনদুর্ভোগ। পূর্বকোণের নিজস্ব সংবাদাতাদের প্রেরিত সংবাদে জানা গেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া ও লোহাগাড়ায় ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

 

খাগড়াছড়িতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি তরমুজ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা এবং নানিয়ারচরে পাহাড়ধ্বসের সর্তকতা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

 

হাটহাজারী

হাটহাজারী উপজেলার উত্তর বুড়িশ্চর ইউনিয়নের ২টি ওয়ার্ডের প্রায় ১হাজার পরিবার গত চারদিন থেকে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া ভারী বর্ষণ ও জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে গড়দুয়ারা, মেখল ইউনিয়ন এবং উপজেলার পৌরসদরের বেশ কয়েকটি স্থান। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

 

বুড়িশ্চর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য মো. জামশেদ আলম বলেন,  হালদা নদীর জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত ২ আগস্ট থেকে বুড়িশ্চর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খালেকের হাট, গুমাস্তার বাড়ী, জলদাশ পাড়া, আকবর ফকির বাড়ী, সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের বাড়ী, বুড়িশ্চর স্কুল, আবেদের বাড়ী, আজগর আলী তালুকদার বাড়ী, তোপার আলীর বাড়ী ও ফৌজদার আলীর বাড়ী ও ২নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদার বাড়ী, মৌলনা বলির বাড়ী  পানিতে ডুবে গেছে। এতে প্রায় ১ হাজার পরিবার সম্পূর্ণ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

 

শিকারপুর ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান এম লোকমান হাকিম জানান, ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের  কুয়াইশ বাদামতল হতে আতর আলী রোডের একাংশ হাবিলদার ইয়ার মোহাম্মদ সড়ক, কুয়াইশ কলেজ রোড, চৌধুরী বাড়ি সড়ক, দক্ষিণ কুয়াইশ প্রফুল্ল মাস্টার সড়ক, বুটি স্কুল, গোল আমগাছতল এলাকা টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে।

 

এদিকে টানা বৃষ্টি ও হালদা নদীর জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় গড়দুয়ারা ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্লুইস গেট ভেঙ্গে  নদীর সাথে বিলিন হয়ে যাওয়ায় হালদা নদীর সংযোগ চেংখালি খালের পানি ঢুকে গড়দুয়ারা ও মেখল ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ গৃহবন্দি ও উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

 

পটিয়া

গত দুই দিনের টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে পটিয়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, মাছের পুকুর ও প্রজেক্ট। উপজেলার আশিয়া, কাশিয়াইশ, জিরি ও কোলগাঁও ইউনিয়ন টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

জিরি ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম খান টিপু জানান, জিরি ইউনিয়নের কৈয়গ্রাম, মোহাম্মদ নগর, কোটারপাড়া, ভেল্লাপাড়া, ইসলামপুর এলাকার প্রায় ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।

 

গতকাল প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এসব গ্রামের অনেকের ঘরের ভেতরও পানি ঢুকে গেছে। অনেকের রান্নাঘরে পানি ঢুকে খাবারও তৈরি করতে পারছেন না। অতীতে ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণে স্থানীয়রা বাধা দেওয়ায় এখন এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

 

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল মামুন বলেন, টানা বর্ষণে পটিয়া উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির কোন খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

 

লোহাগাড়া

উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নস্থ ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব মীর পাড়ায় ভারী বর্ষণে গতকাল সকালে শিশু গাছ উপচে পড়ে স্থানীয় নুরুল আলমের একটি সেমি পাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে, এতে কেউ হতাহত হননি।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বার নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি জানান, চলমান ভারী বর্ষণে বাড়ির পার্শ্ববর্তী গুইদ্যাছড়ি নামক ছড়ায় বানের পানি বৃদ্ধি পায়। এতে ছড়ার পাড়ে থাকা সেমিপাকার ঘরটির উপর গাছটি উপড়ে পড়ে। এতে ১০ লক্ষাধিক টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের রূপনগর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ২০টি পরিবার পানিতে আটকে পড়েছে। জানা গেছে, গত ৩দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে ৯নম্বর ওয়ার্ডের রূপনগর, গাউছিয়া নগর, আনন্দনগর এলাকায় পানি নিষ্কাশনের পথগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানকার বহু পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। ভুক্তভুগীরা জানান, পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কেউ ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিংবা পানি সরানোর ব্যবস্থা  না করায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

এদিকে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার গোরখানা, ছদুরখীল ও যোগ্যাছোলা এলাকার ১০জন চাষি চলতি মৌসুমে মালচিং পদ্ধতিতে ১ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। প্রতিটি খেতে তরমুজের ফলন আসতে শুরু করেছে। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এসব তরমুজ চাষিরা।

 

যোগ্যাছোলা ইউনিয়নের আছাদতলী এলাকার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো. দিদারুল আলমের ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, নিজ উদ্যোগে ২০ শতাংশ জমিতে আগাম মুলা, ২০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালিন তরমুজ ও ৪০ শতাংশ জমিতে কাঁকরোলের চাষ করেন। জমিগুলো নিচু হওয়ায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে এসব জমির ফসল। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক। একই গোরখানার এলাকার খোরশেদ আলম ও শামসুল আলমসহ বেশ কয়েকজন তরমুজ ও মৌসুমি সবজি চাষীও ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

 

নানিয়ারচর, রাঙ্গামাটি

মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে সকল প্রকার নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 

এতে জানানো হয়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় চলমান অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওযা পর্যন্ত কাপ্তাই লেকে সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জরুরি সরকারি কাজে নিয়োজিত নৌযানসমূহ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

 

এদিকে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া জানান, ২০১৭ সালের পাহাড় ধ্বসের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য পাহাড়ের পাদদেশের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদে চলে আসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া জেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের জন্য খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এছাড়া বাড়তি সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রাখা আছে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি যুব ইউনিট।

 

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট