চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কালুরঘাটে নদী পারাপারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ

‘যেন ফুলসেরাত পার হয়েছি’

পূজন সেন, বোয়ালখালী

৫ আগস্ট, ২০২৩ | ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

‘নৌকায় আঁচড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। ঢেউয়ের ঝাপটায় উতাল-পাতাল করছে নৌকা। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে শিশুসন্তানদের আঁকড়ে ধরে আল্লাহ আল্লাহ করে নদী পার হয়েছি। কূলে উঠে মনে হল, যেন ফুলসেরাত পার হয়েছি।’

 

নদী পার হয়ে এভাবেই তিক্ত অনুভূতি ব্যক্ত করলেন বোয়ালখালী পৌরসভার রহিমা বেগম। তিনি জানান, নগরীর বাহির সিগনাল এলাকায় এক নিকটাত্মীয়ের বিয়ে অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। জোয়ারের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত্যন্তর না দেখে শিশুসন্তানদের কোলে নিয়ে চেপে বসলেন নৌকায়। পানির স্রোত ও ঢেউয়ের ঝাপটায় এদিক-ওদিক দুলতে থাকে নৌকা। শিশুদের জড়িয়ে ধরে সারাক্ষণ আল্লাহ নাম স্মরণ করেছেন।

 

সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ রয়েছে কালুরঘাট সেতু। যানবাহন পারাপারে বিকল্প হিসেবে ফেরি চলাচল শুরু হয়। কিন্তু জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে প্রতিদিন ডুবছে ফেরিঘাট, পন্টুন ও সংযোগ সড়ক। ফলে প্রতিদিন হাজারো মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ-কষ্ট সঙ্গী করে নদী পারাপার হচ্ছে।

 

ষাট বছর বয়সী ফরিদ উদ্দিন যাচ্ছিলেন নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তিনি অপারেশনের রোগী। বিকেলে চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। শরীর মানছে না বলে বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। কোমরসমান পানি মাড়িয়ে ফেরিতে উঠেন। তার সাথে রয়েছেন স্ত্রী রাবেয়া বেগমও।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১১টায় চলাচলরত একটি ফেরি নদীর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে। যানবাহন নিয়ে ফেরিটি ১২টা ৫৭ মিনিটে পূর্ব পাড়ে পৌঁছায়। ফেরিতে পার হয়ে আসা শিক্ষার্থী মো. রাকিব বলেন, ‘সেই সকাল থেকে বসে ছিলাম। দেরিতে ফেরি চালু হয়েছে। পূর্বপাড়ে পৌঁছে পড়েছি আরেক বিপত্তিতে। ফেরিঘাট ছাড়াও কালুরঘাট-ভাণ্ডালজুড়ি সড়কের প্রবেশ পথ হাঁটুসমান পানিতে নিমজ্জিত। হাঁটু ও কোমরসমান পানি মাড়িয়ে সড়কের দেখা পেয়েছি।’

 

ফেরিঘাটে ২০-২৫টি নৌকা যাত্রী পারাপার করছে। নৌকার মাঝি সুনীল কৈবর্ত্য জানান, প্রতিজন ১০ টাকা করে নদী পার করছি। প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে। ফেরি এপার থেকে ওপারে যেতে অনেক সময় লাগে। ফেরিতে সময়ক্ষেপণের কারণে লোকজন নৌকায় পারাপার হচ্ছে।

 

নৌকার যাত্রী গিয়াস বলেন, ফেরিতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। শুক্রবার হলেও যেতে হচ্ছে দরকারি কাজে। তাই নৌকা করে নদী পার হচ্ছি।

 

গতকাল (শুক্রবার) সকাল থেকে কালুরঘাটে যানবাহন নিয়ে পারাপার করেছে একটি ফেরি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভোগান্তি নিয়ে নদী পাড়ি দিতে হচ্ছে পারাপারকারীদের। বেলা একটার দিকে নদীতে বাড়তে থাকে জোয়ারের পানি। ডুবে যায় ফেরিঘাটের বেইলি ব্রিজ ও এপ্রোচ সড়ক। এতে ভোগান্তি আরও বাড়ে ফেরি যাত্রীদের।

 

ফেরি থেকে উঠানামায় ভোগান্তির শেষ নেই। গাড়িতে গেলেও নামতে হয় ফেরিঘাটে। কোমরসমান পানি মাড়িয়ে ফেরি চড়তে হচ্ছে। প্রতিদিনই জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়া ফেরিঘাটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফরিদ উদ্দিনের মতো অনেকে ইচ্ছা না থাকলেও জীবিকার তাগিদে, প্রয়োজনে নদী পাড়ি দিচ্ছেন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সয়ে।

 

ফেরির টোল আদায়ের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিযুক্ত মো. জয়নাল বলেন, সকাল থেকে একটি ফেরি চলছে। বিকেল থেকে দুটি চলবে।

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট