বিকালে বৃষ্টি থামার পরপর কুমিল্লা থেকে গরুভর্তি হলুদ-নীল রঙের একটি ট্রাক এসে থামে বিশাল মাঠের এক কোণে। ব্যাপারি সালামত মিয়া ৮ চাকার বড় এই ট্রাক থেকে ১৮টি গরুর একেকটি নামাচ্ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ‘চিৎকার দিয়ে’ উল্লাস প্রকাশ করতে লাগলেন বাজার ঘুরতে আসা কিশোর-তরুণরা।
শুধু কুমিল্লা নয়- শুক্রবার কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০০টি ট্রাকে গরু এসেছে সাগরিকা বাজারে। তবুও নগরীর সবচেয়ে বড় এই বাজার ছিল অনেকটা ফাঁকা। বৃষ্টির কারণে বৈরি আবহাওয়া এবং কোরবানির সময় বাকি থাকায় ক্রেতার সংখ্যাও ছিলো হাতেগোনা।
হাটের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সাগরিকা বাজারে প্রায় আড়াই লাখ পশু রাখা যায়। তবে শুক্রবার পর্যন্ত এই বাজারে কোরবানির পশু এসেছে এক লাখের কিছু বেশি। ধারণ ক্ষমতার অর্ধেকের বেশি জায়গা এখনও ফাঁকা। তবে বিপুল সংখ্যক পশু পথে আছে। আগামীকাল রবিবারের মধ্যে বাজার কোরবানির পশুতে ভর্তি হয়ে উঠবে। বিক্রিও জমজমাট হবে।
কুষ্টিয়া থেকে ২২টি গরু নিয়ে গতকাল (শুক্রবার) সাগরিকা হাটে আসেন ব্যাপারি মো. বাবুল হোসেন। প্রতিটির দাম ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, একে তো রাস্তাঘাট খারাপ, তার ওপর মহাসড়কে যানজট লেগেই আছে। এ কারণে এবার একটু আগেভাগে চলে এসেছি। তবে ঈদের পশু বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যে হবে।
সাগরিকা হাটে সবচেয়ে বড় গরুটি এনেছেন কুমিল্লার মামুন ব্যাপারি। ২০ মণ ওজনের সাদা রঙের এই গরুটির তিনি দাম হাঁকিয়েছেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা। মামুন পূর্বকোণকে বলেন, শখের বসেই দুটি গরু পালন করেছি। গরু দুটির ওজন ৩৯ মণ। বড়টি ২০ মণ। দাম চেয়েছি সাড়ে ৭ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কেনার জন্য ক্রেতা পেয়েছি।
শুক্রবার বিকালে চাকবাজার থেকে গরু কিনতে সাগরিকা হাটে এসেছিলেন আকিজ উদ্দিন। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি থাকে। তবে এখানে এসে সেটি মনে হচ্ছে না। ৯০ হাজার টাকায় কালো রঙের একটি গরু কিনেছি। দ্রব্যমূল্য যেভাবে লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে- সে তুলনায় গরুর দাম বেশি মনে হয়নি।
সাগরিকা বাজারের ইজারাদার এরশাদ মামুন পূর্বকোণকে জানান, প্রতিবছর সম্মানিত কোরবানিদাতারা তাদের পছন্দের পশু কিনতে সাগরিকাকেই প্রাধান্য দেন। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। বৈরি আবহাওয়া এবং কোরবানির সময় বাকি থাকায় এখনও ক্রেতা কিছুটা কম। তবে আগামী রবিবারের পর বিক্রি জমে উঠবে বলে আমরা আশাবাদী।
এদিকে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরেই গরু আসতে শুরু করেছে নুর নগর হাউজিং এস্টেট গরুর বাজারে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপারিরা কোরবানির পশু নিয়ে এই হাটে আসছেন। তবে এখনো হাট জমে উঠেনি। গত বছরের মতো এবার পশু বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান এই হাটের গরু ব্যাপারি ও ইজারাদাররা।
গতকাল (শুক্রবার) নুর নগর হাউজিং এস্টেট গরুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাটে আসা ব্যাপরিরা গরুর পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যাপারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাজশাহী, ফরিদপুর, মাদারিপুর ও নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে তারা কোরবানির পশু নিয়ে হাটে এসেছেন।
নুর নগর হাউজিং এস্টেট গরুর বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. রফিক পূর্বকোণকে বলেন, প্রায় ১০ হাজার গরু রাখার জায়গা রয়েছে এই মাঠে। এখন পর্যন্ত মাত্র দুই থেকে তিন হাজার গরু বাজারে এসেছে। শুক্রবার থেকে বাজার শুরু হলেও এখনো সেভাবে জমে উঠেনি। কিছু ক্রেতা আসছে, তবে এখনো গরু কিনতে আগ্রহী নয় তারা। কেনার চেয়ে দর-দাম দেখছেন বেশি।
ফরিদপুর থেকে গরু নিয়ে আসা রমজান মোল্লা বলেন, আমাদের এলাকা থেকে ১২ জন ব্যাপারি ৫০টি গরু এনেছে এই হাটে। সবগুলো বড় সাইজের গরু। সবগুলো গরুর দামও দুই লাখ টাকার উপরে। গত বছরও আমরা ৫০টি গরু এনেছিলাম। সবগুলোই বিক্রি হয়েছিল। এবছরও সবগুলো গরু বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
পূর্বকোণ/পিআর