শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠার আহবান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, চাকরি প্রত্যাশী ও চাকরি দাতাদের চাহিদার মধ্যে বিস্তর ফারাক। অনেক শিক্ষার্থী ভাল ফলাফল করার পরও সফট স্কিল না থাকায় ভাল করতে পারছে না।
রবিবার (৪ জুন) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কর্মযজ্ঞে কি প্রয়োজন তা এখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মাথায় রেখে গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি করা সম্ভব।
গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় নতুন জ্ঞান সৃজন ও সৃষ্টি করবে। এর জন্য গবেষণা করতে হবে। গবেষণা থেকে উদ্ভাবন, উদ্ভাবন থেকে ইনকিউবেশন, ইনকিউবেশন থেকে কমার্সিলাইজেশন পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। না হয় গবেষণা শেলফে ধুলো জমার জন্য বসে থাকবে।
ডা. দীপু মনি বলেন, একটা সময় এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। এখানে চর দখলের লাঠিয়াল তৈরি হতো। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে সেই চিত্র পাল্টেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা হচ্ছে, গবেষণা হচ্ছে। সামনে দেশের শিক্ষা আরও এগিয়ে যাবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেটের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানো অবশ্যই দরকার। কিন্তু শুধু বাজেট বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। সেই বাজেটকে ব্যবহার করতে পারার জন্য দরকার সুষ্ঠু শিক্ষানীতি ও আদর্শ শিক্ষক।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে ফিজিক্যাল মাস্টারপ্লান নয়, একাডেমিক মাস্টারপ্লান থাকতে হবে। সুন্দর ও মায়াময় পরিবেশের জন্য একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসবে না, আমি কী পড়াচ্ছি, কী শেখাচ্ছি তা দেখেই মূলত একজন শিক্ষার্থীকে পড়তে আসতে হবে। সে লক্ষ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হবে।
ইতিহাস স্মরণ করে ডা. দীপু মনি বলেন, ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। যদি সরকার পরিবর্তনের উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে শুধু রাষ্ট্র প্রধানকে হত্যা করলেই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি তার পুরো পরিবারকেই হত্যা করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে চিরতরে মুছে ফেলা। যারা একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল, তারাই মূলত বঙ্গবন্ধুর পুরো আদর্শটাকেই তারা ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, একজন মানুষকে হত্যা করতে একটা বুলেটই যথেষ্ট৷ কিন্তু আমরা দেখেছি তার পুরো বুকটাই ঝাঁজরা করে দেয়া হয়েছিল। কতটা প্রতিহিংসা পরায়ণ হলে মানুষ তা করতে পারেন। যারা সেদিন গণমানুষের বিপক্ষে ছিল তারাই বঙ্গন্ধুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
রবিবার দুপুর ১২টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সেমিনারের আনুষ্ঠানিকতা। অধ্যাপক ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য ও ড. নাজনীন নাহার ইসলামের সঞ্চালনায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এ সেমিনার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন চবি প্রক্টর ড. নুরুল আজীম শিকদার।
এতে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ