সুদানে সামরিক বাহিনীর সাথে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘাত বন্ধে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়তে রাজি হয়েছে উভয়পক্ষ। আগের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার ঠিক আগে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার খবরের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ আরও পাঁচ দিন বাড়াতে সম্মত হয় উভয়পক্ষ।
মঙ্গলবার (৩০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদানের যুদ্ধরত সামরিক দলগুলো সোমবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ আরও পাঁচ দিনের জন্য বাড়াতে সম্মত হয়েছে। অবশ্য রাজধানী খার্তুমে নতুন করে ভারী সংঘর্ষ ও বিমান হামলার পর মানবিক সংকট কমানোর জন্য পরিকল্পিত এই যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে আগেই সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছিল।
এর আগে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছিল সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী। সোমবার সন্ধ্যায় সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে যুদ্ধরত পক্ষগুলো এটির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়।
রয়টার্স বলছে, যদিও আগের যুদ্ধবিরতি অসম্পূর্ণভাবে পালন করা হয়েছিল, তারপরও আনুমানিক ২০ লাখ মানুষকে ওই এক সপ্তাহে সহায়তা বিতরণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল বলে দুই দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে।
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বৃদ্ধির ফলে দুর্গতদের আরও মানবিক সহায়তা, প্রয়োজনীয় পরিষেবা পুনরুদ্ধার এবং দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনার জন্য আরও সময় পাওয়া যাবে।’
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, সংঘাতের শুরুর পর গত শনিবার থেকে তারা রাজধানী খার্তুমে প্রথম খাদ্য বিতরণ করতে পেরেছে। নতুন চুক্তির বিষয়ে অবগত এমন বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতিকে আরও কার্যকর করতে চুক্তিতে সংশোধনী নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
অবশ্য যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সুদানের বাসিন্দারা নীল নদের সঙ্গমস্থলের আশপাশে – খার্তুম, ওমদুরমান এবং বাহরি সংলগ্ন তিনটি শহরেই যুদ্ধের কথা জানিয়েছিলেন। গত তিন দিনের তুলনায় সোমবার লড়াইয়ের তীব্রতা বেশি ছিল বলেও জানান তারা।
গত ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যকার এই লড়াইয়ের ফলে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং প্রায় ১৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ওমদুরমানের ৫৫ বছর বয়সী বাসিন্দা হাসান ওথমান ফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে সেনাবাহিনী এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের মধ্যে বোমাবর্ষণসহ সব ধরনের অস্ত্র নিয়ে লড়াই হয়েছে। আমরা খুব ভয়ের মধ্যে আছি। কোথায় যুদ্ধবিরতি?’
অবশ্য বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ এবং বিমান হামলা অব্যাহত থাকলেও বিগত কয়েকদিনে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভারী লড়াই থেকে সুদানের বাসিন্দাদের কিছুটা অবকাশ এনে দিয়েছিল।
তবে সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্র এর আগে বলেছে, উভয় পক্ষই বিভিন্ন ভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এবং সেইসাথে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রয়োজনীয় পরিষেবা পুনরায় চালুতে বাধা সৃষ্টি করেছে।
পূর্বকোণ/এসি