চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

চলন্ত অটোরিকশায় অন্তঃসত্ত্বার সন্তান প্রসব রামুতে

রামু সংবাদদাতা

২০ মে, ২০২৩ | ১১:৫১ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের রামুতে চলাচলে অনুপযোগী জরাজীর্ণ সড়ক দিয়ে হাসপাতালে নেয়ার সময় অটোরিকশায় সন্তান প্রসবে বাধ্য হয়েছে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। বুধবার (১৭ মে) সকালে উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মনিরঝিল গ্রামের রামু-সোনাইছড়ি সড়কে এ ঘটনা ঘটে। গৃহবধু আয়েশা ছিদ্দিকা (২২) মনিরঝিল গ্রামের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল ইসলামের স্ত্রী।

 

আয়েশা ছিদ্দিকার শাশুড়ি খতিজা বেগম জানান, তার পুত্রবধুর প্রসববেদনা শুরু হয়। কিন্তু গ্রামের প্রধান সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় কোন গাড়ি পাচ্ছিলেন না। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর একটি অটোরিক্সা এনে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় পুরো সড়ক আরও বেহাল হয়ে পড়েছে। ফলে অটোরিকশাটি খুব ঝুঁকি নিয়ে হেলেদুলেই চলছিল। কয়েকবার গাড়িটি আটকেও যায়। একপর্যায়ে মনিরঝিল সেতুর কাছাকাছি পৌঁছাতেই গাড়ির উপর সন্তান প্রসব হয় আয়েশার।

 

ওই অটোরিকশায় ছিলেন- কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মনিরঝিল গ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মীর কাশেম। তিনি জানান- বাজারে মাছ কিনতে যাওয়ার জন্য বের হয়ে এ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেছিলেন। জরাজীর্ণ সড়কে গাড়িটি ঝুঁকি নিয়ে চলছিল। কিছুদুর যেতেই গাড়িতে থাকা নারীর সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।

 

আয়েশার স্বামী নুরুল ইসলাম জানান- স্ত্রীর প্রসববেদনা শুরু হলে তিনি, মা এবং শাশুড়িসহ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সড়কের নাজুক অবস্থার কারণে পথেই গাড়িতে ছেলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। ওইসময় মা ও নবজাতকের মৃত্যুরও আশংকা ছিল। প্রসবের পর তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে মা ও শিশু চিকিৎসা শেষে বাড়িতে অবস্থান করছে। তিনি অবিলস্বে মনিরঝিল গ্রামের প্রধান সড়কটি সংস্কার করে গ্রামবাসীকে দুর্ভোগের কবল থেকে রক্ষার আবেদন জানান। তার মতো পরিস্থিতিতে যেন আর কাউকে পড়তে না হয়।

 

কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মালেক জানান, সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এলাকার লোকজন এমনিতেই জনপ্রতিনিধিদের উপর ক্ষেপে আছে। এরমধ্যে সড়কে গাড়ি আটকে গিয়ে সন্তান প্রসবের ঘটনায় জনমনে আরও বেশি ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

 

তিনি আরও জানান- বর্তমানে মনিরঝিল গ্রামের ৩টি ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক ও ছোট-বড় সব সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় এসব সড়কে এখন হেঁটেও চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অথচ এ সড়কে মনিরঝিল গ্রামের ১০ হাজারের বেশি জনসাধারণ এবং পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে আসছে। কৃষি নির্ভর এলাকা হওয়ায় কৃষি পণ্য আনা নেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষকরাও চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।

 

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামশুল আলম জানিয়েছেন- জরাজীর্ণ সড়কে সিএনজি অটোরিকশায় গৃহবধুর সন্তান প্রসবের বিষয়টি সত্য। ওই গাড়িতে পরিষদের একজন মেম্বারও ছিলেন। এ ঘটনা খুবই দুঃখজনক এবং পরিষদের জন্য লজ্জাজনক।

 

তিনি আরও জানান- দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ওই গ্রামের সবকটি সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। রাতারাতি সব ঠিক করা সম্ভব নয়। তবে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে সমন্বয় করে বর্ষা মৌসুমের আগেই গ্রামের প্রধান সড়কটি চলাচলের উপযোগী করবেন বলে জানান।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট