চট্টগ্রাম রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫

উপনির্বাচনের আড়ালে প্রস্তুতি জাতীয় নির্বাচনের

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৯ মার্চ, ২০২৩ | ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনের আড়ালে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসলামী দলগুলো। উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামিক ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন পর নির্বাচনে অংশগ্রহণ আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি বলে জানান দুই ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা।

 

আগামী ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৭ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিনে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুুস সামাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ’র সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. কামাল পাশা, স্বতন্ত্র প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী ও মীর মো. রমজান আলী।

 

গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল ইসলামী ফ্রন্ট। সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিল ইসলামী ফ্রন্ট। পরে আবার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন দলীয় প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম। আসন্ন জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামিক ফ্রন্ট আলাদাভাবে প্রার্থী দিয়েছে।

 

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুসংহত করার লক্ষ্যে আমরা সবসময় নির্বাচনের পক্ষে ছিলাম, এখনো আছি। আমরা চাই, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসুক।’ নির্বাচনে শেষপর্যন্ত লড়ে যাবেন বলে জানিয়ে ইসলামিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘সব নির্বাচনে আমরা স্বাভাবিকভাবে অংশগ্রহণ করি। নির্বাচনী পরিবেশ ইতিবাচক হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামিক ফ্রন্ট।’

 

ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুুস সামাদ বলেছেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। আশা করছি, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’

 

গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, বোয়ালখালী ও চন্দনাইশ উপজেলায় ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছিলেন। বর্তমানে চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী।

 

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এমএ মতিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের কয়েকটি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে বোয়ালখালী হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সেই হিসাবে আমরা প্রার্থী দিয়েছি।’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে দাবি করে মাওলানা এমএ মতিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, বিএনপির পর আমরাই মাঠে রয়েছি। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, সিলেট বিভাগে মহাসমাবেশ করেছি। ঈদের পর অন্যান্য বিভাগেও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে আমরা আগামী নির্বাচনের জন্য ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

 

বড় কোনো জোটের সঙ্গে জোট বেঁধে বা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এমএ মতিন। তিনি বলেন, ‘এককভাবে নির্বাচন করলে চট্টগ্রামের বেশির ভাগ আসনে প্রার্থী করানো প্রস্তুতি রয়েছে।’ মিরসরাই, সন্দ্বীপ ও সাতকানিয়া আসনে ইসলামী ফ্রন্টের দুর্বল অবস্থানের কারণে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা আপতত নেই বলে জানান তিনি।

 

আগামী নির্বাচনে ইসলামী ফ্রন্ট কোন জোটের সঙ্গে জোট বাঁধছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এককভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বড় কোনো রাজনৈতিক দল যদি আমাদের নিয়ে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তখন আমরা চিন্তা-ভাবনা করবো। কারণ আমরা আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো জোটে নেই। নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কোনো জোটে যাবো না।’

 

চলতি বছরের শেষদিকে বা আগামী বছরের প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে।

 

ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামিক ফ্রন্ট নামে দুই ধারায় বিভক্ত এই ইসলামী দলটি। দুই দলই আলাদাভাবে প্রার্থী দিয়েছে উপনির্বাচনে।

 

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব জয়নাল আবেদীন জুবাইর পূর্বকোণকে বলেন, ‘অতীতে জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে আমরা প্রার্থী দিয়েছি।’ সারাদেশে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে এসব সমাবেশে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার দাবি-দাওয়া করে আসছি। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

 

প্রসঙ্গত, আজ (২৯ মার্চ) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। ৫ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন। ৬ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট