চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

সরকারি বিদ্যুৎ বেচে বাস্তুহারা সমিতি!

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

সরকারি খাস জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা বাস্তুহারা বস্তিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে বিদ্যুতের অবৈধ বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করে আসছেন সমিতির গুটিকয়েক নেতা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাস্তুহারা সমবায় সমিতির অধীনে ৫টি মিটার থেকে শত শত ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। বাস্তুহারা সমিতির সভাপতি উত্তম কুমার সুশীল, সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন, অর্থ সম্পাদক মো. ফারুক ও আলোচিত সোহেল কুটুম দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ-বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। বস্তির ১০ বাসিন্দা ও সাবেক এক নেতার সঙ্গে কথা হয় পূর্বকোণের।

 

তারা বললেন, সমিতির নামে বিদ্যুতের ৫টি বড় মিটার রয়েছে। প্রতিটি মিটার থেকে কমপক্ষে শতাধিক ঘরে সাব-মিটার সংযোগ দেওয়া হয়েছে। নতুন সংযোগ নিতে মিটারপ্রতি গুনতে হয় ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা। এছাড়াও দুই হাজার টাকা সংযোগ ফি নেওয়া হয়। মিটার ফি ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। সাব-মিটারগুলো থেকে মাসে ইউনিট প্রতি ১৪ টাকা করে বিদ্যুৎ বিল আদায় করেন সমিতির নেতারা। মিটার সংযোগ ছাড়াও কয়েক শ অবৈধ সংযোগ রয়েছে। সমিতির নেতাদের ম্যানেজ করে এসব সংযোগ নেওয়া হয়।

 

বস্তিবাসী ও সমিতির নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে হিসাব করে দেখা যায়, পাঁচ শতাধিক সাব-মিটারে গড়ে ১৩ হাজার টাকা করে হলেও নতুন সংযোগে ৬৫ লাখ টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় বস্তিতে নতুন ভাড়াটিয়া সেজে কথা হয় বাস্তুহারা সমিতির অর্থ সম্পাদক মো. ফারুক ও বিদ্যুৎ বাণিজ্যের অন্যতম হোতা সোহেল কুটুমের সঙ্গে।

 

তারা দু’জনই বলেন, সমিতির নামে ৫টি মিটার রয়েছে। সেই মিটার থেকে ভাড়াটিয়াদের সংযোগ দেওয়া হয়। সমিতির অর্থ সম্পাদক মো. ফারুক বলেন, ‘ভাড়াটিয়াকে মিটার দেওয়া হয় না। জমিদারের নামে মিটার দেওয়া হয়।’ ইউনিটপ্রতি ১৪ টাকা করে মাসে বিদ্যুৎ দিতে হয় বলে জানান তিনি।

 

বস্তিবাসী জানান, বাস্তুহারা বস্তিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বিদ্যুৎ বাণিজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সোহেল কুটুমের। সোহেল কুটুম বলেন, ‘আমি এখন আর অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবসা করি না। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে মুচলেকা দিয়ে এসেছি। সমিতির মিটার থেকে এখন সংযোগ নিতে হবে। এজন্য প্রথমে সংযোগ ফি ১০ হাজার টাকা ও কার্ড ফি দুই হাজার টাকা দিয়ে সংযোগ নিতে হবে।’

 

একাধিক বস্তিবাসী বলেন, তিন মাস আগ থেকে ১৪ টাকা করে বিল নিচ্ছে। এর আগে ইউনিটপ্রতি ১৮ টাকা করে বিল আদায় করেছেন সমিতির নেতারা। তারা আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ বস্তি এলাকায় নতুন কোনো সংযোগ দেয় হয় না। সমিতির মিটার থেকে সংযোগ নেওয়ার জন্য বাধ্য করে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা দাবি করেন, অবৈধ বিদ্যুৎ বাণিজ্য থেকে বাকলিয়া বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের বড় অঙ্কের মাসোহারা দিতে হয়।

 

বাকলিয়া বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজুল হক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বৈধ জায়গা না হওয়ায় বাস্তুহারা বস্তিতে ১০-১২ বছর ধরে বিদ্যুতের কোনো মিটার সংযোগ দেওয়া হয়নি। ওই এলাকায় মানুষের বসতি থাকায় আমরা অস্থায়ী মিটার দিয়েছি। সেই মিটার থেকে সমিতির সদস্যদের মধ্যে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।’

 

২০১৪ সালে নগরীর সদর সার্কেলের তৎকালীন এসি ল্যান্ড সামিউল মাসুদ অবৈধ দখলদারের বিষয়ে এক প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে দেখা যায়, কর্ণফুলীর তীরে বাকলিয়া এলাকায় ১৫৮ দশমিক ৪৫ একর ভূমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। দখল হয়ে যাওয়া জমি বাকলিয়া ও কোতোয়ালী থানা এলাকার অন্তর্ভুক্ত। দখল করা জমিতে কাঁচা ঘর, দোকান, ভবন, বালুর স্তূপ, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, মৎস্য প্রকল্প, জসিম উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়, সৎসঙ্গ বিহার, দাতব্য চিকিৎসালয়, প্লাস্টিক ও বোতল কারখানা এবং মুরগির খামার গড়ে তোলা হয়েছে।

 

স্থানীয়রা জানান, বাকলিয়া বস্তি এলাকায় ১৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর রয়েছে। এরমধ্যে আবার বৈধ মিটারও রয়েছে।

 

বিদ্যুৎ কর্মকর্তা রিয়াজুল হক বলেন, ‘অন্য জায়গার মিটার স্থান পাল্টিয়ে এখানে (বস্তুহারা বস্তি) ব্যবহার করা হয়েছে। জায়গার বৈধ কাগজ না থাকায় এখানে মিটার সংযোগ দেওয়া হয় না।’

পূর্বকোণ/আরএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট