চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

লাইকেন সিমপ্লেক্স বার বার হতে পারে এমন চর্মরোগ

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১:০৮ অপরাহ্ণ

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

 

লাইকেন সিমপ্লেক্স মূলত একধরনের স্থানীয় এবং ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী একজিমা। তীব্র ও মারাত্মক চুলকানি থাকায় স্থানীয় চামড়া মোটা হয়ে লাইকেনিফাইড হয়ে যায়। ধারণা করা হয়, এই রোগটিতে স্থানীয় সেনসরি স্নায়ু-তন্তুসমূহ অতি উত্তেজিত হয়ে এক প্রকার নিউরোপ্যাথিতে পরিণত হয়। ফলে তীব্র চুলকানির উদ্ভব ঘটে। তাই এটিকে অনেকসময় নিউরোডার্মাটাইটিসও বলা হয়ে থাকে। আবার দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক চর্মরোগ বিধায় এটিকে লাইকেন সিমপ্লেক্স ক্রনিকাসও বলা হয়। শিশুদের মধ্যে এটি হয়না বললেই চলে। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ বিশেষত যাদের এংজাইটি বা অবসেসিস কম্পালসিভ ডিসওর্ডার নামক মনোবিকার থাকে তাদের বেশি দেখা যায়। এটোপিক, কন্টাক্ট বা ভেনাস একজিমা, সোরিয়াসিস, লাইকেন প্ল্যানাস, পোকার কামড় বা ছত্রাকজনিত চর্মরোগ, নিউরোপ্যাথি, ইত্যাদি কিছু রোগকে প্রাথমিক চুলকানির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও; কেন এটি হয়, কেনইবা দীর্ঘস্থায়ী তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।
লাইকেন সিমপ্লেক্স চর্মরোগটি এককভাবে এবং শরীরের একপাশে দেখা গেলেও, একাধিক এবং শরীরের উভয় পাশে দেখা যেতে পারে। এটি আমাদের শরীরের ঘাড়ে, অন্ডকোষে, যোনির বাইরের অঞ্চলে, কব্জিতে, নিম্নবাহুতে এবং হাঁটুর নিচ থেকে গোড়ালির মধ্যবর্তী অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। আকার আকৃতিতে থাকতে পারে ভিন্নতা। হতে পারে গোলাকার, ডিম্বাকার কিংবা একটু লম্বাটে। প্রাথমিকভাবে চর্মরোগটি শুকনা ও খসখসে চাকচাক থাকলেও চুলকানির ফলে নখের আঁচড়, কালচে দাগ, ছিলা বা ভেজাভাব, চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া, লোমহীনতা, ক্ষত ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। তীব্র চুলকানিতে সৃষ্টি হতে পারে ব্যথাসহ মারাত্মক প্রদাহ বা ইনফেকশন। রোগটি নির্ণয়ের জন্য খুব একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে প্রাথমিক কারণ নির্ধারণের জন্য স্কীন-স্ক্রাপিং বা বায়পসী করা প্রয়োজন। কোনো কারণ পাওয়া না গেলে নিউরোপ্যাথি ধারণা করা হয়। এছাড়াও স্নায়ু জটিলতাসহ দেহগত কিছু রোগের সম্পৃক্ততা নির্ণয় করার জন্য কিছু পরীক্ষা করা যেতে পারে।
লাইকেন সিমপ্লেক্স রোগটি না হবার জন্য তেমন কোনো কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা নাই। তবে যে কোনো উপায়ে চুলকানি বন্ধ করতে পারলে এটির মাত্রা কিংবা স্থায়ীত্ব কমে যেতে পারে। প্রাথমিক কারণ জানা গেলে তার চিকিৎসা প্রয়োজন নতুবা রোগটির প্রতিকারক চিকিৎসা মূলত লক্ষণ-উপসর্গ ভিত্তিক হয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে উচ্চ-মাত্রার স্টেরয়েড মলম দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে মাত্রা কমিয়ে আনতে হয়। পাশাপাশি ব্যবহৃত হতে পারে- টার, কুলিং বা এন্টিবায়টিক মলম। মাত্রাভেদে চর্মরোগে সরাসরি স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। ত্বক নরম-মসৃণ রাখার জন্য ভেসিলিন ব্যবহার খুবই প্রয়োজন। মুখে খাবার জন্য নানান ধরণে এন্টি-হিস্টামিন ও ট্রাইসাইক্লিক এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট দেওয়া হয়ে থাকে। জটিলতা বিচারে এন্টিবায়টিক, স্টেরয়েড কিংবা ফটো-থেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অনুমোদিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ অতীব প্রয়োজন।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট