চট্টগ্রাম শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

নামাজ-রোজার মতোই জাকাত ফরজ ইবাদত

রায়হান আজাদ

২০ মার্চ, ২০২৫ | ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

মাহে রমজান ইবাদতের মওসুম। এ মাসে ইসলামের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সম্পাদিত হয়। ফজিলত, বরকত ও রহমতে ভরপুর এ মাসে মুমিনের হৃদয়-মন সওয়াবের ফোয়ারায় ভরে ওঠে। রোজা ও জাকাত দুটি পর্যায়ক্রমিক ফরজ। ২য় হিজরিতে রোজা ফরজ হওয়ার পরপরই শাওয়াল মাসে জাকাত ফরজ হয়। আর মাহে রমজানে এ দুটি আঞ্জাম দিতে হয়; এতে অতিরিক্ত সওয়াব মিলে।

 

অবশ্য যে কারও যখনই গচ্ছিত সম্পদের বর্ষপূর্তি হবে তখনই তার জাকাত আদায় করে দিলে কোন আপত্তি নেই। হজরত ইবনে আকিল ‘আল ওয়াজেহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, জাকাত ফরজ হয়েছে রোজা ফরজ হওয়ার পর। ইসলামে জাকাত নামক অর্থনৈতিক ইবাদতের বহু হুকুম-আহকাম রয়েছে। কোরআন ও হাদিসে যে পদ্ধতি অনুসরণ করে জাকাত আদায় করার জন্য বলা হয়েছে তা যথাযথভাবে পালন না করলে এ ফরজ আদায় হবে না।

 

জাকাত প্রদানের খাত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, জাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্তাকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এ হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। (সুরা আত-তাওবা: আয়াত ৬০)।

 

সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ আর সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য এক বছর পর্যন্ত গচ্ছিত থাকলেই ব্যক্তির নিসাব পূর্ণ হয়। টাকার ক্ষেত্রে সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য অথবা এর বাজারমূল্যকে নিসাব হিসেবে গণ্য করা হয়। জাকাত প্রদানের হার হচ্ছে গচ্ছিত সম্পদের ২.৫%।

 

আমাদের দেশে দেখা যায়, বহু লোক হিসাব-নিকাশ না করে গরিব প্রতিবেশীকে কিংবা মাদ্রাসা-মসজিদে কিছু দান-সদকা করেই জাকাত আদায়কারী সাজতে তৎপর হয়ে ওঠেন। আর অনেকে দিনক্ষণ ঠিক করে ডাক-ঢোল পিটিয়ে অপরিকল্পিতভাবে গরিবদের মাঝে টাকা-পয়সা ও শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করেন; তাতে অসহায় ভিক্ষুক-ফকিররা ঠেলাঠেলিতে পড়ে মারা যাবার ঘটনাও ঘটে। এ রকম পরিস্থিতির অবতারণা করা শরিয়তসম্মত নয়।

 

জাকাতের উদ্দেশ্য কেবল দারিদ্র্য বিমোচন নয়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন এবং সম্পদের ভারসাম্য বিধান। সম্পদে কমবেশি করে কিংবা কোন ধরনের ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়ে যদি যথাযথভাবে জাকাত আদায় করা না হয় তাহলে তার সমুদয় সম্পদ অপবিত্র হয়ে যাবে, পতিত হবে ধ্বংসের মুখে।

 

হাদিস শরিফে এসেছে, ‘জাকাত যে মালের সাথে মিশ্রিত হয়ে থাকবে অবশ্যই তার বিপর্যয় ঘটবে।’ (বাজ্জার-বায়হাকি)। অনুরূপ আরেকটি হাদিসে উল্লেখ আছে, স্থল ও জলভাগে ধন-সম্পদের যে বিপর্যয় ঘটে তা শুধু জাকাত আটকে রাখার দরুন। (মজমুয়ায়ে জাওয়ায়েদ)।

 

নবী করিম (সা.) জাকাত আদায়ের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক যাকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন সে যদি জাকাত আদায় না করে তাহলে কেয়ামতের দিন তা একটি বিষধর অজগরে রূপ ধারণ করবে; যার দুই চোখের উপর দুটি কালো চিহ্ন থাকবে। বলবে, ‘আমিই তোমার ধন-মাল, আমিই তোমার সঞ্চয়।

 

ইসলামি অর্থনীতির মূল উৎস জাকাত। সুতরাং জাকাত সংগ্রহকারী যেকোন নির্ভরযোগ্য ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারিভাবে পরিচালিত বাংলাদেশ জাকাত বোর্ডের উদ্যোগে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে দেশের প্রায় ৫০ লাখ জাকাত ও ওশর দিতে সক্ষম ব্যক্তির কাছ থেকে সমুদয় জাকাত আদায় করে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হলে দেশ থেকে দরিদ্রতা দূর হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান, কেটে যাবে যাবতীয় অপ্রাপ্তি-অসন্তোষ।

 

আল্লাহ পাক আমাদেরকে ইসলামের অপরিহার্য বিধান জাকাত সম্পর্কে আরও বিস্তারিত অধ্যয়নপূর্বক চুলচেরা হিসাব করে সম্পদের জাকাত দানের তৌফিক দান করুন; আমিন।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট