চট্টগ্রাম বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

কোরবানির পশু ও গোশত সম্পর্কে বিধি-নিষেধ

অনলাইন ডেস্ক

১৬ জুন, ২০২৪ | ২:৪৮ অপরাহ্ণ

মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টিতে কোরবানি নামক যে ত্যাগের পরীক্ষা সেখানে অবশ্যই সুঠাম ও সুস্থ পশু কোরবান করতে হবে। কোরবানির পশুর চোখ কান ভাল করে দেখে নেয়ার জন্য রাসূল (সা.) তার সাহাবীদের নির্দেশ দিতেন।

 

তিনি বলতেন, “তোমরা এমন পশুর কোরবানি করো না যার কানের অগ্রভাগ বা গোড়ার অংশ কাটা, কানের অংশ ছিদ্র বা যার কান লম্বালম্বিভাবে ফেঁড়ে দেয়া হয়েছে। খোঁড়া জন্তু যার খোঁড়ামি সুস্পষ্ট, অন্ধ পশু যার অন্ধত্ব পুরোমাত্রায় বিদ্যমান, রোগাক্রান্ত ও ক্ষীণকায় পশু রোগের কারণে যার হাড়ের মাজা পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে তা কোরবানি করা যাবে না। ”

 

উট, গরু, মহিষ, ছাগল, দুম্বা ও ভেড়া ছাড়া অন্য কোন পশু দিয়ে কোরবানি করলে তা জায়েজ হবে না। একটি উট, গরু বা মহিষ সাতভাগে কোরবানি করা যায়। এতে একজনে একা বা পৃথক পৃথক সাতজনে কোরবানি করলেও সহীহ হবে। তবে সবার উপার্জন ও নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে।

 

ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার শুধুমাত্র একভাগ  কোরবানি হবে। দুম্বা, ছাগল ও ভেড়ার বয়স পূর্ণ এক বৎসর হতে হবে। তবে এসব পশু এক বৎসর বয়সের আদৌ পাওয়া না গেলে দেখতে এক বৎসর বয়সের মত লাগে এমন ছয়মাস বয়সের হলেও চলবে। গরু ও মহিষ পূর্ণ দুই বৎসর এবং উট পাঁচ বছর বয়সের হতে হবে। তার কম বয়সের হলে কোনটির কোরবানি জায়েজ হবে না। 

 

কোরবানির গোশত নিজে খাবে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের মাঝেও বন্টন করবে। এক তৃতীয়াংশ গরিব মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করে বাকীটুকু নিজের জন্য এবং আত্মীয়-স্বজনের মাঝে ভাগ করা উত্তম। গরিবদের মাঝে তার কম বিতরণ করলেও তেমন দোষ নেই।

 

কোরবানির গরুর চামড়া বা তার বিক্রিত অর্থ অসহায়, দরিদ্র ও মিসকিনদের মাঝে সাদকা করে দিতে হবে। কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি খাওয়া ও জমা করে ফ্রিজে রেখে দেয়া জায়েজ তবে যে মহল্লায় কোরবানিদাতার সংখ্যা কম আর গরিব মিসকিনদের সংখ্যা বেশি সেখানে সবাই গোশত না পাওয়ার আশঙ্কা থাকলে গোস্ত তিনদিনের চেয়ে বেশিদিন রাখার জন্য জমা করা উচিত নয়।

 

কোরবানির গোশত অমুসলিমদের মাঝে বিতরণ করা জায়েজ আছে এমনকি তাদের রান্নাবান্না করেও খাওয়ানো যায়। গর্ভবর্তী কোন পশু কোরবানি করা হলে তার পেটে বাচ্চা পাওয়া গেলে তাও জবেহ করে কোরবানি করতে হবে।

 

যে চাকু বা বটি দিয়ে কোরবানির পশু জবেহ করা হবে তা অবশ্যই ধারালো হতে হবে এবং জবেহ করার সাথে পশুর বাঁধন খুলে দিতে হবে। যত্রতত্র জবেহকৃত পশুর বর্জ্য ফেলা যাবে না। সিটি কর্পোরেশন কিংবা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্দিষ্ট ডাস্টবিন কিংবা সাগর-নদীতে ময়লা-আবর্জনা ভসিয়ে দিতে হবে। 

 

আমাদের সমাজে দেখা যায়, কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে রমরমা ব্যবসা হয়, চাঁদাবাজি ও জোর জবরদস্তির শেষ থাকে না। ইসলাম কোন অবস্থাতেই গরিবের হক নিয়ে টানাটানি পছন্দ করে না।

 

কোরবানির পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে আভিজাত্যর প্রতিযোগিতায় নামা, অযাচিত দর হাঁকানোসহ সকল ধরনের অপচয় থেকে বিরত থাকার জন্য ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। রাসূল (সা.) এর জামানায় কোরবানির নিয়ম-কানুন কি ছিল জানতে চাইলে সাহাবী আবু আইয়ুব আল অনছারী (রা.) বলেন, “তখন সামর্থবান ব্যক্তি তার ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কোরবানি করতো এবং তা নিজেও খেতো অন্যদেরও খাওয়াতো। অবশেষে লোকেরা গর্ব ও আভিজাত্যের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। ফলে অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তা তুমি নিজেই দেখতে পাচ্ছো। ”

 

কোরবানি একটি মহাপবিত্র ধর্মীয় বিধান। এ কাজে অসদোপায় ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়া কিছুতেই উচিৎ নয়। ইসলামী শরীয়ত যেভাবে এ মহান বিধান পালনের জন্য নীতিমালা ও দিক-নির্দেশনা দান করেছে আমাদের উচিত ঠিক সেভাবেই তা আন্জাম দেয়া। আল্লাহ পাক আমাদেরকে ইসলামী পন্থায় কোরবানি করার তৌফিক এনায়েত করুন। আমিন ।

 

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট