চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

সুদ নয়, জাকাতই সম্পদ বৃদ্ধি করে

রায়হান আজাদ

৩০ মার্চ, ২০২৪ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

জাকাত ইসলামের অন্যতম রুকন। আমাদের দেশে সাধারণত অধিকাংশ ধনী মুসলিম রমজান মাসেই জাকাত দিয়ে থাকে। জাকাত আরবী শব্দ, এর অর্থ পবিত্রতা, আধিক্য, ক্রমবৃদ্ধি প্রভৃতি। পবিত্র কালামে পাকে জাকাতকে সাদকা বলেও অভিহিত করা হয়েছে। পরিপূর্ণ ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হচ্ছে জাকাত, যাকে আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রিক ভাষায় সামাজিক নিরাপত্তা বিধান বলা হয়। ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় ছাহেবে নিসাবের ধন-সম্পদ ইসলামী শরীয়াত নির্ধারিত পন্থায় অবশ্যই পরিশোধযোগ্য সেই অংশকেই বুঝায় যা আল্লাহ পাকের রেজামন্দি হাসিলের জন্য নির্ধারিত আটটি খাতে ব্যয় করা হয়। শরীয়াতে মুসলমানদের জমিতে ঊৎপাদিত ফসলের জাকাতকে উশর বলে। উশরের নিসাব হচ্ছে বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত ফসলের দশভাগের এক ভাগ আর সেচের পানিতে উৎপাদিত ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ অথবা সমপরিমাণ শস্যের বাজার মূল্যের অর্থ প্রতি মৌসুমে আদায় করা।

 

জাকাত কোন দান কিংবা করুণা নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কর্তৃক নির্ধারিত ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার। নামাজ ও জাকাত সমমানের ফরজ। পবিত্র কুরআনে নামাজের মতো ৮২ বার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের আলোচনা এসেছে। যেখানে নামাজের কথা বলা হয়েছে সেখানেই জাকাতের কথা উত্থাপিত হয়েছে। ইসলামে জাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদেরকে কাফির ঘোষণা করা হয়েছে এবং ইসলামের প্রথম খলীফা সাইয়েদুনা হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। ইহ ও পরকালে তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সালাত কায়িম করো এবং যাকাত দাও। তোমরা উত্তম কাজের যা কিছু পূর্বে নিজেদের জন্য প্রেরণ করবে আল্লাহর কাছে তাই পাবে।’ (আল বাকারা-২৭৭) আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত অন্য জায়গায় বলেছেন, ‘মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি ঘটবে মনে করে তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে জাকাত তোমরা দিয়ে থাক তাই বৃদ্ধি পায়। তারাই সম্পদশালী। (সুরা আর রুম-৩৯)

 

রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার পর সরকারিভাবে জাকাত উসুল করে আল কুরআনের আলোকে বন্টন করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘তোমাদেরকে একসাথে আদেশ করা হয়েছে নামাজ কায়িম ও যাকাত আদায়ের জন্য। তাই কেউ যাকাত না দিলে তার নামাজও হবে না।’ (তাফসীরে তাবারী) হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. বলেন, ‘নামাজ এবং যাকাত একটি অপরটির সম্পূরক, একটি ছাড়া অপরটি কবুল হয় না।’ দ্বিতীয় ওমর নামে খ্যাত ইসলামের পঞ্চম খলীফা হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রা.) বলেন, ‘নামাজ আল্লাহর দিকে অর্ধেক পথ এগিয়ে নেয়, রোজা আল্লাহর প্রাসাদের দোরগোড়ায় পৌঁছায় এবং দান (যাকাত) আল্লাহর প্রাসাদে প্রবেশে সহায়ক হয়।’

 

বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ আইইউএমএস’ এর সভাপতি আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী (রা.) তার ‘ইসলামে যাকাতের বিধান’ গ্রন্থে বলেন, ‘দারিদ্র বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা ও দরিদ্র-অভাবগ্রস্ত, অক্ষম লোকদের প্রতি কর্তব্য পালনে ইসলামের যে রীতি ও অবদান, কোন আসমানী ধর্মগ্রন্থ বা মানব রচিত বিধানই তার সমতুল্য হতে পারে না।’

 

দারিদ্র্য দূরীকরণ ও আর্তমানবতার কল্যাণে ইসলামের গঠনমূলক বিধান যাকাতই সবার মৌলিক চাহিদা পূরণ সাপেক্ষে আমাদের সমাজের ধনী-নির্ধন দেয়াল ভেঙ্গে দিতে পারে। তাই যারাই ঈমানের দাবিতে অটল তাদের সবাইকে সম্পদের আদ্যোপান্ত হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। আয় আল্লাহ! আমাদের ছাহেবে নিসাবদেরকে সে মর্মোপলদ্ধির তৌফিক দান করুন। আমিন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট