পবিত্র হজ আজ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২০টি দেশের ১৮ লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি হজ পালন করছেন। এ বছর বাংলাদেশ থেকে (ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ) ৮৭ হাজার ১৫৭ জন হজ পালন করছেন। তালবিয়া পাঠ এবং মহান আল্লাহ তায়ালার একত্ব ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণায় আজ মুখর আরাফাতের ময়দানের আকাশ-বাতাস।
সমবেত কণ্ঠে ঘোষণা হচ্ছে, ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান-নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ, আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোন শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নেয়ামত তোমারই এবং একচ্ছত্র আধিপত্যও কেবল তোমার। তোমার কোনও শরিক নেই। আজ বৃহস্পতিবার মহানবী হজরত মোহাম্মদের (সা.) বিদায় হজের স্মৃতিবিজড়িত আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন হজযাত্রীগণ। শ্বেতশুভ্র পোশাকে আবৃত এসব হজযাত্রী জাবালে রহমতের পাদদেশ ও মসজিদে নামিরার আশপাশে অবস্থান নিয়ে জীবনের পরম কাক্সিক্ষত হজ পালন করবেন। মূলত এ দিনের জন্যই পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন সক্ষম মুসলিমরা।
গত মঙ্গলবার রাতেই পবিত্র নগরী মক্কা থেকে হজযাত্রীরা মিনায় পৌঁছেন। সেখান থেকে আজ ফজরের নামাজের পর মোয়াল্লিমরা গাড়িতে করে তাদের নিয়ে যাবেন আরাফাতে নির্ধারিত তাঁবুতে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাদের আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হবে; এটাই মূলত হজ। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল হাজ্জু আরাফাহ।’ অর্থাৎ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ।
এখানে হজযাত্রীদের ফজর ছাড়াও জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করতে হবে। আজ স্থানীয় সময় দুপুরে ঐতিহাসিক আরাফাতের প্রান্তরে অবস্থিত মসজিদে নামিরায় মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশে হজের খুতবা দেবেন মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম ও খতিব শায়খ সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ।
এবারও হজের আরবি খুতবা বাংলাসহ মোট ৩৪টি ভাষায় শোনা যাবে। বাংলা ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করবেন চার বাংলাদেশি ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান, মুবিনুর রহমান ও নাজমুস শাকিব। তারা মক্কার বিখ্যাত উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজিগণ মহান আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করে জীবনের সব গুনাহের ক্ষমা চাইবেন। এরপর যাত্রা শুরু করবেন মুজদালিফার উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছামাত্র মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজানে, দুই ইকামাতে আদায় করবেন তারা। এরপর মুজদালিফায় মসজিদে মাশয়ারিল হারামের আশপাশে উন্মুক্ত আকাশের নিচে মাথাখোলা অবস্থায় রাতযাপন করবেন। পরের দিনগুলোতে জামারাতে নিক্ষেপের জন্য এখান থেকেই পাথর সংগ্রহ করবেন তারা।
১০ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর আবার মিনায় ফিরে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পূর্বে বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানির পর মাথা মুণ্নড করে ইহরাম ত্যাগ করবেন হাজিগণ। সুযোগ বুঝে মক্কার মসজিদুল হারামে গিয়ে ফরজ তাওয়াফ করতে হবে তিনদিনের মধ্যে। ১১ ও ১২ জিলহজও হাজিগণ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর ৩টি জামারাতে ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে।
যারা সংক্ষেপ করতে চান তারা ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করবেন। পরে মক্কায় ফিরে বিদায়ের দিন বিদায়ী তাওয়াফের পূর্ব পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে প্রতি ওয়াক্তের নামাজ ও যত বেশি সম্ভব তাওয়াফে সময় কাটাবেন হাজিগণ।
পূর্বকোণ/ইবনুর