চট্টগ্রাম শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

সর্বশেষ:

ইসলামে নারীর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি!
ফাইল ছবি

ইসলামে নারীর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি!

নাসির উদ্দিন

১৬ মে, ২০২৫ | ১:৩৫ অপরাহ্ণ

পৃথিবী সৃষ্টি কয়েক লাখ বছরের হলেও মানব সৃষ্টির ইতিহাস ১০-১১ হাজার বছরের। আল্লাহ মানব সৃষ্টির পর পরুষ ও মহিলাকে আলাদা কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। কিছু আমল মহিলা-পুরুষ একসাথে সমানভাবে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ পুরুষকে, আবার কিছু ক্ষেত্রে মহিলাকে প্রধান্য দিয়েছেন। এভাবে দুনিয়ার শৃংখলা বজায় রেখেছেন। মা হিসেবে নারীদের আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। মায়ের আনুগত্যের মধ্যে সন্তানের বেহেশত। তবে জ্ঞান অর্জন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। সবার যদি সমান অধিকার হয় দুনিয়ায় শান্তি-শৃংখলা থাকবে না। ইসলামে মহিলাদের উপর পুরুষদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এ কারণে আগে মহিলা সৃস্টি করেননি,আগে সৃষ্টি করেছেন পুরুষ। এভাবে যাতে জন্মগতভাবে পুরুষের কতৃত্ব মহিলাদের উপর থাকে।

 

আবার নেক আমলসহ কিছু ক্ষেত্রে উভয়কে সমান মর্যাদা দিয়েছেন। আর কিছু ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে। পুরুষ গর্ভধারণে অক্ষম। এভাবে আল্লাহপাক যে যতটুকু পাওয়ার, তাকে ততটুকু ন্যায্য অধিকার দিয়েছেন। সবক্ষেত্রে সমান অধিকার দিতে গেলে তা ন্যায্য না হয়ে জুলুমের অর্ন্তভুক্ত হবে।যেটা মহিলা পারবেনা সেটা তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া যেমনি অন্যায়, তেমনি যেটা পুরুষ পারবেনা সেটাও তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া অন্যায়।

 

আল্লাহপাক মা-বাবার খেদমতের ক্ষেত্রে মা-কে প্রাধান্য দিয়েছেন। সাহাবীরা কার সাথে ভালো আচরন করবেন,এমন প্রশ্নের জবাবে মহানবী আল্লাহর নির্দেশনায় পরপর ৩ বার বললেন,তুমি তোমার মায়ের সাথে ভালো আচরন করো। চতুর্থবারে বাবার সাথে ভালো আচরন করার কথা বলেন। আচরন ও সেবার ক্ষেত্রে মা-কে প্রাধান্য দিয়েছেন। বিশেষ করে মায়ের নাফরমানি আল্লাহ নিষেধ করেছেন।

 

হাদীসে আছে-মায়ের নাফরমানি তোমাদের জন্য হারাম। মা-বাবার নাফরমানি কবিরা গুনাহর অর্ন্তভুক্ত। জাহেলি যুগে নারীদের ভোগের পণ্য মনে করা হতো। নারীর কোন মর্যাদা ছিল না। কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতো। সেটা তোমাদের জন্য হারাম। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করা হারাম। প্রতিটি ধর্মে তাদের অবহেলা করা হতো। ইসলাম সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দিয়েছে নারীদের।

 

সুরা নিসা’র প্রথম আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, “হে পৃথিবীর সকল মানুষ।তোমার আল্লাহকে ভয় কর,যিনি তোমাদেরকে একব্যাক্তি আদম (আ:) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তারই থেকে তার স্ত্রী হাওয়া (আ:)কে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের উভয় থেকে পৃথিবীতে মানবজাতিকে সম্প্রসারণ করেছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর,যার উছিলায় তোমার একে একে অন্যের কাছে নিজেদের হক চেয়ে থাক। আত্নীয়দের অধিকার খর্ব করাকে ভয় কর।নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি সতবর্ক দৃষ্টি রাখেন”। এভাবে আজ আমরা দুনিয়াতে কোটি কোটি মানুষ দেখতে পাচ্ছি।

 

মহানবী সর্বপ্রথম নারীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেন।তিনি সতর্ক করেন কোন কন্যাশিশু জন্ম নিলে অসম্মানবোধ করবে না। সন্তান দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ ছেলে সন্তান যেমনি দেন, তেমনি মেয়ে সন্তানও দেন। কাউকে ছেলে সন্তান দেন। যেমন ইব্রাহিম (আ:) কে দিয়েছেন। আবার কাউকে মেয়ে সন্তান দেন। লুত(আ:)-কে কন্যা সন্তান দিয়েছেন।আমাদের নবী মুহাম্মদ(সা:) কে ছেলে-মেয়ে উভয় সন্তান দিয়েছেন। আবার কিছু মানুষ আছে, যাদের কোন সন্তান দেন না। যেমন ইয়াহিয়া (আ:)এর কোন সন্তান ছিল না। ইছা (আ:)এর কোন সন্তান ছিল না।

 

জাহেলি যুগে ছেলে সন্তান হলে খুশি। মেয়ে সন্তান হলে পেরেশানিতে পড়তো। ঘর থেকে বের হতো না কয়েকদিন। জাহেলি যুগের সেই প্রথাকে বিলুপ্ত করেছে ইসলাম। আল্লাহপাক নবীর মাধ্যমে মেয়ে সন্তানকে জীবিত থাকার অধিকার দিয়েছেন। সাথে কন্যার বাবা হওয়াকে নেয়ামত বলেছেন।কন্যাশিশুর জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করেন। যার ৩টি কন্যা সন্তান হলো। তাদের লালন পালন করে বিয়ের ব্যবস্থা করলো। তখন তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। একটি কন্যা সন্তানের ব্যপারেও একই সিদ্ধান্ত। এমনকি বোনকে লালন-পালন করে বিয়ের ব্যবস্থা করলেও একই পুরষ্কার রয়েছে। ছেলের ব্যাপারে রাসূল (সা:) বলেননি,মেয়ে ও বোনের ব্যাপারে বলেছেন।কারণ তারা দুর্বল। সেই কারণে তাদের লালন-পালনের ব্যাপরে উৎসাহিত করার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। এর এর্থ এই নয় যে,আপনার রিজিক থেকে মেয়ে ও বোনকে খাওয়াচ্ছেন। তাদের রিযিক আল্লাহ আপনার আয়ের মধ্যে দিয়েছেন। তাদের জন্য আপনার রিযিকে আল্লাহ বরকত দিয়েছেন।তাদের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে ওই পরিমান রিযিক আপনার কাছ থেকে সরে যাবে।

 

কোরাআনে আল্লাহপাক বলেছেন,বিবিরা তোমাদের পোশাক,তোমার তাদের পোশাক।অর্থাৎ একজনের সাথে অপরজনের গভীর সম্পর্ক।মহানবী বলেছেন, বিবিরা বাম পাজরের হাড্ডি থেকে সৃষ্টি।সুতরাং তোমার যদি সেটাকে সোজা করতে যাও,সেটা ভেঙ্গে যাবে।আবার ছেড়ে দিলে,আরো বেশি বাঁকা হয়ে যাবে।তাহলে সেখানে তোমাদের ছাড় এবং শাসন দুটোই করতে হবে।বিবি হিসেবেও নারীদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।ঘরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি হলো,যে বিবির কাছে শ্রেষ্ঠ।বিবি যদি বলে আমার স্বামী ভালো,এটাই বড় সার্টিফিকেট।বিবির জন্য রোজকার করা রিযিকে আল্লাহ লোকমায় লোকমায় নফল সওয়াব দিবেন।নবীর মাধ্যমে আল্লাহপাক বিবির হক বর্ণনা করেছেন।কেউ যদি মোহর উল্লেখ নাও করে অটো মোহর ওয়াজিব হয়ে যাবে। নিজের বোন-কিংবা ফুফুর সমপরিমানে।

 

সমাজের শৃংখলা রক্ষার জন্য মর্যাদায় কারো উপরে কারো স্থান নীচে। নারী সংস্কার কমিশন ৩১৮ পৃষ্টার প্রতিবেদন দিয়েছেন।সেখানে অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের সমান অধিকার,উত্তরাধিকার আইনে সমান অধিকার এবং শ্রম আইনে যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশসহ ১০জায়গায় ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে। নারী-পুরুষের সমান অধিকার। সূরা নিসায় আছে:অর্থাৎ পুরুষ মহিলার দ্বিগুণ পাবে। ওরা যদি এখানে সমান অধিকার চায় তাহলে তাদের এটাও করা উচিত বিয়ে করার সময় নারীরা মোহরানা পাবে না। ওখানে সমান অধিকার হলে মোহর পাবে কেন? নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দেয়া জুলুম। কারণ:ইসলামে নারীদের কোন খরচের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। বরং নারী যদি কোটিপতিও হয় তাঁর অন্ন,বস্ত্র,চিকিৎসা, বাসস্থানের দায়িত্ব স্বামীর। কিন্তু ছেলে গরীব হলেও তার স্ত্রীর খরচ বহনে বাধ্য। নাবালক ছেলে-মেয়ের খরচ বহন করবেন পিতা। আবার নিজের খরচও বহন করতে হবে। আপনি ধনী-গরীব যাই হন,একজন পুরুষের এই ৪জনের খরচ বহন করা ফরজ। এরপর আপনি ধনী হলে মা-বাবা,ভাই-বোন গরীব হলে তাদের সহযোগিতা করা জরুরী।

 

অনেক সময় দেখা যায়,মোহরানায় সম্পত্তির অধিকার থেকে বেশি পাচ্ছে। সেই কারনে ইসলাম সমান অধিকারের কথা বলে না। ইসলাম ন্যায্য অধিকারের কথা বলে। অর্থাৎ যার যা হক,সেটা দেয়াই হলো ন্যায্য অধিকার। ধরুন আপনি দান করেছেন। একটি পরিবারে দুই জন,অন্য পরিবারে ৭জন সমস্য। তাদের সমান দান করলে হলো? ন্যায্য হলো যার পরিবারে লোক বেশি তাকে বেশি দেয়া। তাদের ইসলামের জ্ঞান না থাকার ফসল যৌনকর্মীকে শ্রমিকের অধিকার দেয়ার সুপারিশ।ইসলামে কেয়ামত পর্যন্ত ব্যাভিচার হারাম।

 

দত্তক শিশুকে আসল শিশুর মর্যাদা দেয়া ইসলামে বৈধ নয়। ছেলে-মেয়ে লালন-পালন করা জায়েজ। রাসূল(সা:) জায়েদ বিন হারেছা-কে লালন-পালন করেছেন। লোকজন বলতো-জায়েদ বিন মুহাম্মদ।কিন্তু আল্লাহপাক কোরআনের আয়াত নাযিল করে বলেছেন,জায়েদ বিন মুহাম্মদ বলা যাবে না। আসল বাবার নাম ধরে তাকে জায়েদ বিন হারেছা ডাকতে হবে। কেউ কোন শিশু লালন-পালন করলে তার পিতার নামে পরিচিত হবে,পালক পিতার পরিচয়ে নয়। সম্পদের অধিকারও পাবে না। কিছু দিতে হলে তাকে জীবিতবস্থায় দিতে হবে।অছিয়ত করলের পাবে তিনভাগের একভাগ।বাবা ডাকতে পারবে। কিন্ত পরিচয়ের ক্ষেত্রে তার আসল বাবার নাম লিখতে হবে।

 

লেখক: ব্যুরো চিফ, বাংলাভিশন, চট্টগ্রাম

 

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট