
সকালের রোদে জলমল করতে থাকে মাঠবর্তী হলুদ সরিষা ফুল। যতদূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ। যেন সবুজ মাঠ হলুদের চাদরে ডাকা। চন্দনাইশের শঙ্খ তীরবর্তী বিস্তীর্ণ বিল এলাকা সরিষার মন-মাতানো হলুদ ফুলে ভরে উঠেছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। শিশিরে ভেজা ভোরে মধু আহরণের দলে দলে ছুটছে মৌমাছির দল। এ হলুদ সমুদ্রে হারিয়ে যেতে কার না মন চাই। গত কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষে দেওয়া হচ্ছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়।
চন্দনাইশের শঙ্খ নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকেরা অন্যান্য সবজির পাশাপাশি সরিষা চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছে বলে জানান। সরিষা আবাদে উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক অনেক কম। এতে ফলন ভালো হলে উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লাভ হয়। লাভের পরিমাণ অন্য ফসলের চেয়ে বেশি হওয়ায় অনেকে উৎসাহিত হয়ে সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
কৃষকদের মতে, সরিষা আবাদে খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে। পাশাপাশি দেশে সরিষা থেকে পাওয়া ভোজ্যতেলের চাহিদার কারণে সরিষার দাম সব সময়ই তুলনামূলক বেশি থাকে। ভোজ্যতেলের আমদানি কমিয়ে আনতে কৃষি বিভাগ সারা দেশে সরিষা আবাদের উপর জোর দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাড়ছে সরিষা চাষ। এ কারণে রবিশস্য মৌসুমে অন্যান্য ফসলের আবাদের পাশাপাশি সরিষার আবাদ বাড়াচ্ছেন কৃষকেরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শঙ্খ তীরবর্তী দোহাজারী, লালুটিয়া, বরমা, চর-বরমা, চন্দনাইশ পৌরসভা, কাঞ্চননগর, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী এলাকায় ব্যাপক হারে সরিষার চাষাবাদ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বলেছেন, প্রতি বছরই কিছু কিছু এলাকায় বন্যার সঙ্গে পলি পড়া এ অঞ্চলের জমির সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে, এতে সরিষার উৎপাদন ভালো হয়। সরিষা বিক্রি করে কৃষক দ্বিগুণ টাকা আয় করতে পারেন, যা অন্যান্য ফসলে সম্ভব নয়। গত মৌসুমে ১৬৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হলেও চলতি মৌসুমে ২শ হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩শ হেক্টর।
কৃষকেরা বোরো চাষের পূর্বে যে সময় থাকে, সে সময়ে বারি সরিষা-১৪ চাষ করে মাত্র ৮০ দিনে ফলন পাওয়ার কারণে কৃষকেরা সরিষা চাষে এগিয়ে আসছে। ফলে চন্দনাইশের প্রত্যন্ত শঙ্খ নদীর তীরবর্তী এলাকা যেন পরিণত হয়েছে সরিষার প্রান্তরে। যতদূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ। যেন সবুজ মাঠ হলুদের চাদরে ডাকা। যা দেখে বাম্পার ফলনের আশাও করছেন কৃষকরা। বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ৯ মণ সরিষার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
পূর্বকোণ/ইবনুর