
চন্দনাইশ উপজেলার বরকল কানাইমাদারী নিদাগের পাড়ার মো. আলমগীর (৫০) হোটেল বয় থেকে কয়েক বছরে কোটিপতি। সাজা পরোয়ানাসহ ৮টির অধিক মামলার আসামি হয়েও বীরদর্পে ব্যবসা করেছেন চন্দনাইশ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। পাশাপাশি চন্দনাইশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান, কম্বল বিতরণ করে সেজেছেন সমাজসেবক।
চন্দনাইশ বরকল কানাইমাদারী নিদাগের পাড়ার মো. শাহজাহানের ছেলে মো. আলমগীর। হঠাৎ করে বিপুল অংকের টাকার মালিক হয়ে উঠেন।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রতিবেদককে জানান, ২০১৪ সালের পূর্বে আলমগীর সিএনজি চালক, পরবর্তীতে হোটেল বয়ের কাজ শুরু করেন, তারপর কিছুদিন বরকল বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করেন। ২০১৪ সালে নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় শ্রমিক সরবরাহ করতে শুরু করেন।
তার ভাই মো. জাহাঙ্গীর জানান, তার পিতা মারা যাওয়ার পর পতেঙ্গা ডিপোতে মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রমিক সরবরাহ কাজ শুরু করেন। সব সময় তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০০-২৫০ শ্রমিক তাদের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরববরাহ করেন। প্রতিজন শ্রমিক থেকে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে ব্যবসা করে আসছিলেন। পাশাপাশি বন্দরে খালি কার্টন সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন তারা। কিন্তু করোনায় লকডাউনের সময় তাদের একটি কন্ট্রাক মিস হওয়ায় অনেক বড় লোকসানে পড়ে যায় তার ভাই আলমগীর। ইতিমধ্যে তার বড় ভাই তাকে ইতালিতে পাঠান। সেখানে তিনি ৫ বছর অবস্থান করার পর দেশে ফিরে এসে ২ ভাই মিলে একসাথে ব্যবসা করছেন বলে জানান।
একই এলাকার সাইফুল ইসলাম নামের একজন জানান, তারা ২ ভাই একসাথে দুবাই সারজা’তে গিয়ে সেখানে প্রতারণা করে বিভিন্ন লোকজন থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে আসে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি প্রতিবেদককে জানান, মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন লোকজন থেকে লাভ দিবে বলে প্রতারণা করে নগদ অর্থ নিয়ে আলমগীর রাতারাতি হয়ে যায় কোটিপতি। এসব বিষয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেও বিপদে আছে ভুক্তভোগীরা। তিনি জানান, নিজ গ্রাম কানাইমাদারী নিদাগের পাড়া এলাকায় ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন ৩ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। এসব টাকায় আয়ের উৎস প্রতিবেদকের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ ব্যবহার করে তিনি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কাঠগড়, চন্দনাইশের কানাইমাদারী নিজ এলাকায় গোডাউন ভাড়া নিয়ে চন্দনাইশ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মুদির দোকানের মালামাল সরবরাহ শুরু করে।
একই এলাকার হাসানুর রশিদ জানান, ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে গত ২০২৪ সালের ৩ জুন ৬ষ্ঠ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি ১০ লক্ষ টাকার চেক প্রতারণা মামলায় ১০ মাসের কারাদন্ড ও ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আলমগীর সে মামলায় গ্রেপ্তার হয়নি।
পুলিশের পিসিপিআর এর তথ্য থেকে জানা যায়, আলমগীরের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা মামলা চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট- ৪ এ সিআর ১৪৮/২০ (সাজাপ্রাপ্ত), সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোলার আদালতে সিআর ৮৫/২৪, সিআর ২৯৬/২০২০ (চন্দনাইশ), সিআর ১৪০৩/২০২০ (কোতোয়ালী) সাজাপ্রাপ্ত, সিআর ১০২২/২০২১ (কোতোয়ালী), সিআর ১৪৭২/২০২০ (কোতোয়ালী) মামলাগুলো চলমান রয়েছে। তাছাড়া শাহপরান থানা ১৪(৯)২০২০ বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা, কোতোয়ালী থানা ৭২(৯)২০ জাল-জালিয়তির মামলা চলমান রয়েছে।
২টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলমগীর সাজা পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কিভাবে চন্দনাইশ ও চট্টগ্রামে বীরদর্পে ব্যবসা করার পাশাপাশি সমাজসেবক সেজে বিতরণ করছেন শীতবস্ত্র ও নগদ অর্থ। এলাকার লোকজনের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত ২৫ নভেম্বর বরকল কানাইমাদারী এলাকায় বিভিন্ন মাদরাসার ২ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ ৫’শ শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। সেখানে ব্যানারে তার ছবি লাগিয়ে মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠান করেন তার অনুসারীরা। অথচ তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানা সিআর ১৪৭২/২০ মামলায় গত বছর ৩ জুন, আনোয়ারা থানার সিআর ১৪৮/২০ মামলায় গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর সাজা পরোয়ানা জারী করেন আদালত। এ ব্যাপারে ২৭৭৮/২০২৫ মূলে সাজা পরোয়ানা চন্দনাইশ থানায় পাঠালেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী হাসানুর রশিদ।
এ সকল বিষয়ে মো. আলমগীরের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার ভাই জাহাঙ্গীরের সাথে। জাহাঙ্গীর মামলার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ৮টি চেকের মামলাসহ যে সকল মামলাগুলো রয়েছে এ ব্যাপারে তার ভাই আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করছেন। খুব শীঘ্রই আদালতে আত্মসমার্পন করে আইনিভাবে এ সকল মামলা নিস্পত্তি করবেন বলে জানান। তবে যারা মামলা করেছেন তারা বেশি টাকা উল্লেখ করে মামলা করেছেন। যে কারণে তিনি বাড়িতে আসতে পারেন না। প্রায় রাতে পুলিশ বাড়িতে এসে তাকে খোঁজাখুজি করে।
এ ব্যাপারে চন্দনাইশ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইলিয়াস খান বলেছেন, তিনি সদ্য থানায় যোগদান করেছেন। ওয়ারেন্ট বা সাজাপ্রাপ্ত আসামি থাকলে অবশ্যই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে। এই বিষয়ে তিনি কোন প্রকার ছাড় দিবেন না।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ