চট্টগ্রাম শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

চাঁদাবাজি, মহেশখালীতে ছয় মৎস্য-লবণ প্রকল্প বন্ধ

চাঁদাবাজি, মহেশখালীতে ছয় মৎস্য-লবণ প্রকল্প বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

মহেশখালীর ছয়টি কৃষি প্রকল্প পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। সন্ত্রাসী বাহিনীর বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও লুটপাটের তাÐবে এসব প্রকল্পের সাড়ে তিনশ একর জমির চাষাবাদ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে কয়েক’শ শ্রমিক-কর্মচারী। প্রকল্পগুলো থেকে লুট হয়েছে মাছ, লবণ ও যন্ত্রপাতিসহ কয়েক কোটি টাকার মালামাল। এসব ব্যাপারে প্রশাসনকে অবহিত করার পরও কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না অভিযোগ। সন্ত্রাসী বাহিনীর মিথ্যা মামলা ও হুমকির কারণে প্রকল্প মালিকগণ বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানা গেছে। প্রকল্প এলাকায় তারা যেতে পর্যন্ত পারছেন না। তবে এসব ব্যাপারে অভিযুক্ত মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

 

কেস স্টাডি-১: হোয়ানকের কেরুনতলী এলাকার এস এম জালাল উদ্দিন ও গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন যাবৎ যৌথভাবে মৎস্য ও লবণ চাষ করে আসছেন। কক্সবাজার পুলিশ সুপার বরাবরে দায়েরকৃত এক অভিযোগে এস এম জালাল উদ্দিন জানান, চলতি বছরের ৯ আগস্ট দিবাগত রাতে মো. ইসমাঈল (৪২), মাহবুব আলম (২৫), রবিউল আলম (২৭) সৈনিক মিয়া (২২) ও ওমর আলীসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জন তার মূল চিংড়ি ও লবণ চাষাবাদ প্রজেক্টে অবৈধ অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রবেশ করে শ্রমিকদের ভয়ভীতি প্রদশর্ন করে, এছাড়া তার নিকট ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাৎক্ষণিক শ্রমিকদের প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে মৎস্য ও লবণ চাষাবাদ এলাকা হতে বের করে দেয়। পরবর্তীতে মৎস্য ও লবণ চাষ প্রকল্পের প্রায় ১০ লক্ষ টাকার বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায় এবং তাকে উক্ত এলাকায় যেতে নিষেধ করে।

 

এছাড়াও উক্ত প্রকল্পে গেলে কোস্টগার্ডকে ব্যবহার করে তাকে অপহরণ পূর্বক হত্যা গুম করবে মর্মে জানায়। বিষয়টি নিয়ে মহেষখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অভিযোগ করলেও তিনি উক্ত বিষয়ে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বর্তমানে দেশীয় ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা মহেষখালী হোয়ানক ইউনিয়স্থ বেক্সিমকো ফিশারিজ লি. এলাকায় ঘুরাফেরা করছে এবং তাদের ভয়ে তিনি ও তার অংশীদারসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীগণ তাদের প্রজেক্টে কোন ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না।

 

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে উক্ত বিষয়ে কোস্টগার্ড স্টেশন কক্সবাজার এবং কোস্টগার্ড পূর্ব জোন সদর দপ্তরকে মৌখিকভাবে অবহিত করলেও আইনগত কোন প্রতিকার পাননি। অভিযোগে জালাল উদ্দিন আরো জানান, মো. ইসমাঈলের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যা ও গুমের দায়ে ৬ টি মামলা, অস্ত্র, ইয়াবা, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি মামলা ৪ টি, সরকারি কাজে বাধাদান মামলা ৪টি ও হত্যাচেষ্টা, লুটপাট, ভাংচুর ইত্যাদি দায়ে ৮ টি সহ সর্বমোট ২২ টি মামলা রয়েছে।

 

কেস স্টাডি ২: মহেশখালীর হোয়ানক ই্উনিয়নের অমবস্যাখালী ঘোনার মৎস্য ও লবণ চাষি মৌলভী নেজাম উদ্দিন জানান, ইসমাইল বাহিনী সম্প্রতি চাঁদা দাবি করে না পেয়ে চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ ও মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ লুট করে নিয়ে যায়। এব্যাপারে তিনি থানা ও আদালতে তিনটি মামলা দাযের করেন। যা বর্তমানে তদন্তাধীন।

 

কেস স্টাডি-৩: একই এলাকার নতুন ঘোনা এলাকার মৎস্য ও লবণ চাষী আইয়ুব খান গং জানান, উক্ত ইসমাইল বাহিনী তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে প্রজেক্টের মাছ ও মাছ ধরার বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এব্যাপারে থানায় মামলা করতে গেলেও থানা মামলা নেয়নি। ইসমাইল বাহিনী উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

 

ইসমাইলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মহেশখালীতে দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকা সদ্যবিদায়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুরুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা রয়েছে, তাকে গ্রেপ্তারের জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাইনি। বর্তমার ওসি মুজিবুর রহমান বলেন, আমি সবেমাত্র গত মঙ্গলবার যোগদান করেছি। আমার কিছু জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

 

এসব অভিযোগের ব্যাপারে মোহাম্মদ ইসমাইলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তারা এসব অভিযোগ করছেন। তাদের সাথে এক সময় আমার ভাল সম্পর্ক ছিল। এখন না থাকায় নানা ষড়যন্ত্র করছে। ২২টি মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি স্বীকার করছি তখন তারা অনেক অন্যায় কাজে আমাকে ব্যবহার করেছে। এখন আমি কোন অন্যায় কাজের সাথে জড়িত নই। আমাকে ব্যবহার করতে পারছে না বলে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করছে। এখন আমি বিভিন্ন লোকের জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করছি।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট