
সারি সারি তরমুজ গাছ। তাতে ঝুলছে সবুজের ওপর কালো ডোরাকাটা তরমুজ। যতদূর চোখ যায় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে হলুদ আর সবুজ রঙের তরমুজ। মালচিং ও মাচাং পদ্ধতিতে এসব গাছে অসময়ে তরমুজ ফলেছে। উঁচু জমিতে মালচিং ও মাচাং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন মিরসরাইয়ের অনেক কৃষক। ফলটি চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ইউনিয়নের নিশ্চিন্তা, মসজিদিয়া বুজননগর ও মাছুমেরতালুকে বেশ কয়েকজন কৃষক।
কৃষকরা জানান, কম খরচে বেশি ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় সন্তুষ্ট তারা। উচ্চ ফলনশীল তরমুজ চাষ করে অল্প সময়ে এবং কম খরচে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ লাভ করছেন।
কৃষকরা আরো জানান, অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় বাড়ছে তরমুজ চাষ। এবার মিরসরাইয়ে স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর আওতায় আটজন কৃষককে উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কার্যালয় থেকে প্রদর্শনী প্লট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিজ উদ্যোগে চাষ করেছেন আরো দুইজন কৃষক। এবার উপজেলায় ৩০০ শতক জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।
২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো মিরসরাইয়ে ৫০ শতক জমিতে অসময়ের তরমুজ চাষ শুরু হয়। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে তা দাঁড়িয়েছে ৩০০ শতকে। উপজেলায় চাষ হওয়া তরমুজের জাতের মধ্যে অন্যতম ব্লাক বেবি, সূর্য ডিম, বাংলালিংক, রসগোল্লা, লিয়োনা, কিংসুপার, বিগবাইট, জাফরান ও সুইটবাইট।
উৎপাদিত তরমুজের ওজন তিন কেজি থেকে শুরু করে ১০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। বীজ রোপণের পর ফল বিক্রির উপযুক্ত হয় ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে। প্রতিকেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়।
এদিকে, মালচিং ও মাচাং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে কৃষকরা সফলতা পাওয়ায় এতে অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন। ফলে অসময়ে তরমুজ চাষ নিয়ে কৃষিতে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। আগামীতে আরো বড় পরিসরে তরমুজ চাষের স্বপ্ন বুনছেন অনেক কৃষক। এ ব্যাপারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। তারা কৃষকদের মালচিং পেপার, সার, বীজ সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তা ও পরামর্শে অসময়ের তরমুজ আবাদ করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। আমার জমিতে আড়াই কেজি থেকে শুরু করে সাড়ে চার কেজি ওজনের তরমুজ আছে। আশা করছি প্রায় চার টন তরমুজ উৎপাদন হবে।’ তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে চাষের জন্য নগদ টাকা, সারসহ নানা উপকরণ দেওয়া হয়েছে। আমার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এক পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে দেড় লাখ টাকায় তরমুজ বিক্রি করেছি। হয়তো খুচরা বিক্রি করলে দুই লাখ টাকা বেশি লাভ করা সম্ভব হতো।’
আরেক কৃষক রাজু চন্দ্র দাশ বলেন, ‘আমি প্রথমবার ৩৩ শতক জমিতে ছয়টি জাতের তরমুজ চাষ করেছি। মালচিং পদ্ধতিতে এই চাষে খুবই ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সর্বাত্মক সহযোগিতায় আমি সফলতা পাবো বলে আশাবাদী। এখনও বিক্রি শুরু হয়নি। কয়েক দিনের মধ্যে বিক্রি শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিন লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো বলে আশাবাদী।’
কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে তরমুজ চাষ করতেছি। প্রথমবার সফলতা পাওয়ায় এবারও ৩৩ শতক জমিতে বøাক বেবি, বাংলালিংক, সূর্যডিমসহ কয়েকটি জাতের তরমুজ চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে মালচিং পেপার, সার, বীজসহ নানা সহযোগিতা পেয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। ৮৫ হাজার টাকা আমার খরচ হয়েছে। আশা করছি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো।’
মিরসরাই উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (খৈয়াছড়াও মসজিদিয়া বøক) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলার খৈয়াছড়া-মসজিদিয়া বøকে অসময়ের তরমুজের আটটি প্রদর্শনী করেছি। কৃষি অফিস থেকে সার, বীজ, মালচিং পেপারসহ আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। গত তিন বছর ধরে আমার আওতাধীন বøকে অসময়ের তরমুজ চাষ হচ্ছে। কৃষকরা অল্প সময়ে ভালো লাভ পাওয়ায় তরমুজ চাষ দিন দিন বাড়ছে।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ৫০ শতক জমিতে অসময়ের তরমুজ চাষ শুরু হয়। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে তা দাঁড়িয়েছে ৩০০ শতকে। তিনি বলেন, স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি)-এর আওতায় আমাদের পক্ষ থেকে তরমুজ চাষিদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। লাভজনক হওয়ায় ক্রমান্বয়ে অসময়ের তরমুজ চাষি বাড়ছে।
পূর্বকোণ/ইবনুর