
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী সাগর উপক‚লে একটি শিপইয়ার্ড ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার সময় উত্তোলনকারীদের ধাওয়া দিলো এলাকাবাসী। এতে সাগর থেকে ইয়ার্ড পর্যন্ত স্থাপন করা পাইপ সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় উত্তোলনকারীরা। গ্রামবাসীদের দাবী উপকূলীয় গাছপালা কেটে, বালি রাখার জন্য সুবিশাল গর্ত খনন করে পাইপ স্থাপন করে প্রাকৃতিক পরিবেশের চরম ক্ষতি করা হচ্ছে। এতে জেলেদের সামুদ্রিক মৎস্য আহরণও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী সাগর উপক‚লে অবস্থিত কেএসএ স্টিল নামক একটি বন্ধ শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে গত কয়েকদিন ধরে সাগর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এই খবর পেয়ে এলাকাবাসীরা গতকাল মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। এক পর্যায়ে তাদেরকে পাইপ সরিয়ে নিতে চাপ দিলে তারা পাইপ গুটিয়ে নেয়। স্থানীয়দের দাবি ইয়ার্ডের কাযক্রম বন্ধ করে সাগর থেকে বালু উত্তোলন করছে ডিপ বিগাস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে গতকাল ভাটিয়ারী সাগর পাড়ে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ভাটিয়ারী বিএমএ-২ নং গেইটের থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে সাগর উপকূলে পরিত্যক্ত কেএসএ স্টিল নামে একটি শিপইয়ার্ডে বড় একটি গর্ত খনন করা হয়েছে। ইয়ার্ডটিতে দায়িত্বরত আনসার সদস্য বেলাল উদ্দিন জানান, সাগর থেকে উত্তোলনকৃত বালু রাখার জন্য খনন করা হয়েছে ইয়ার্ডের জায়গায়। এ ইয়ার্ডে বিগত কয়েক বছরে কোন জাহাজ কাটা হয়নি। এখন বালু তোলার উদ্দেশ্যে ইয়ার্ড থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত বসানো হয়েছে পাইপ। সাগরে থাকা ড্রেজার ও বাল্কহেড থেকে এই পাইপ দিয়ে বালুগুলো এনে খননকৃত স্থানে রাখা হবে। স্থানীয় মৎস্যজীবী সন্তোষ কুমার জলদাশ বলেন, সাগর থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের সাগরের গতিপথ হারাচ্ছে। মাছ শিকার ব্যাহত হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাজী কামাল উদ্দিন ও ফরিদুল আলম বলেন, সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে। অথচ ইয়ার্ডটি সরকার থেকে লীজ নেওয়া হয়েছে স্ক্যাপ জাহাজ কাটার জন্য। নিয়ম লঙ্ঘনের সাজা কে দেবে?
ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ার বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বে পাহাড় ও পশ্চিমে সাগর। এক কিলোমিটার জায়গার মধ্যে যদি সাগর থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে তাহলে পরিবেশ ধ্বংস হবে। উপক‚ল ভাঙনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা গৃহহারা হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফখরুল ইসলাম বলেন, সমুদ্র থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। শিপইয়ার্ডে স্ক্যাপ জাহাজ ভাঙা বা কাটিং করার জন্য লিজ দেওয়া হয়। সেখানে বালু মহাল করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমি শুনেছি বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে বালু উত্তোলন করা হয়। সুতরাং কেউ যদি অনুমতি না নিয়ে বালু উত্তোলন করে সেটা দেখার দায়িত্ব তাদেরই (বন্দরের)।
বালু উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান ডিপ বিগাস লিমিটেড দায়িত্বরত কর্মকর্তা সাহিদুল আলম মাসুদ মুঠোফোনে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ বালু মহলের ইজার দিয়েছে। সেই আলোকে বালু উত্তোলন করছি। উপজেলার শীতলপুরসহ একাধিকস্থানে বালু উত্তোলন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়র মামুন নামক ওই প্রতিষ্ঠানের অপর এক কর্মকর্তা।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিসার্চ অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, বালু উত্তোলনের অনুমতি ডিসি অফিস দেয়। আমরা তো দিইনা। তবে আমরা বালু উত্তোলন এলাকায় কোন পরিবেশের ক্ষতি হলে তা পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট দেয়া আমাদের কাজ।
পূর্বকোণ/ইবনুর