
রাউজানে র্যাব, পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর একের পর এক সন্ত্রাসী আটক, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে আতংক কাটছে সাধারণ মানুষের মনে।
গত একমাসের ব্যবধানে রাউজানে র্যাব, পুলিশ একাধিক অভিযান করেছে। বিশেষ করে উপজেলার দক্ষিণাংশের সবচেয়ে সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকা নোয়াপাড়ায় ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি কদলপুর, পাহাড়তলী, বাগোয়ান, পূর্ব গুজরা, উরকিরচরেও তারা বিভিন্ন অভিযান চালিয়েছে। ইতিপূর্বে পুকুর সেচে বার বার অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে নোয়াপাড়া থেকে। এতে বড় ধরনের অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে।
র্যাব, জেলা পুলিশ কখনো একত্রে, কখনো পৃথক অভিযান করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন সন্ত্রাসী কার্যালাপ বন্ধ, অস্ত্র উদ্ধার, আসামি গ্রেপ্তার তৎপরতায় রাউজানে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি প্রকাশ করছে। তাদের আশা, রাউজান সন্ত্রাসমুক্ত হবে শীঘ্রই। আগামী নির্বাচন হবে নির্বিঘ্ন। সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বিপিএম-বার’র বলেছেন ‘রাউজানে হয়তো পুলিশ থাকবে, নয়তো সন্ত্রাসী থাকবে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধারে বদ্ধপরিকর। রাউজানকে আর অশান্ত করতে দেয়া হবে না।’
থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভুইয়া বলেন ‘সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশ রাতদিন কাজ করছে। বাকি আসামিরা ধরা পড়বে পুলিশের জালে।’
জানা যায়, সবচেয়ে অশান্ত এলাকা রাউজানের নোয়াপাড়া, কদলপুর, রাউজান ইউনিয়ন, রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড এবং উপজেলার দক্ষিণাংশের এলাকাগুলো। প্রশাসনের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ইতিমধ্যে মানুষ আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তারা এখন পুলিশ এবং র্যাবের উপর ভরসা রাখছেন।
তবে নাম প্রকাশ না করে এলাকার অনেকে বলেছেন ‘রাউজানে আরো অনেক শীর্ষ, মাঝারি টাইপের সন্ত্রাসী অধরা রয়ে গেছে। তাদের কাছে রয়েছে ভারীসহ বিভিন্ন অস্ত্র। তাদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে রাউজানে পুরোপুরি শান্তি নেমে আসবে।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত উদ্ধার করা হয় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), রা- উজান ও পটিয়া থানা পুলিশের সমন্বিত বিশেষ অভিযানে। এতে দুই ভাইসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকার জহির আহাম্মদ (৫২), মোহাম্মদ হাবিবের ছেলে মো. রানা (২৫) ও মো. সাকিবুল ইসলাম (২২)। জহির আহাম্মদ সাকিবুলের শ্বশুর। গত ১৮ নভেম্বর নোয়াপাড়ার চৌধুরীহাটের মুদি দোকানদার জহির আহাম্মদকে আটক করা হয়। তার দোকান থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিনে ভর্তি দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়। জহির আহাম্মদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পটিয়ার হাইদগাঁও মাইজপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাকিবুল ইসলাম ও রানা নামের দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে আরও একটি একনলা বন্দুক ও তিনটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে একই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া হুমায়ূন উদ্দীন আকাশের তথ্যে নোয়াপাড়ার চৌধুরীহাট হাজি মকবুল আহাম্মদ সওদাগরের বাড়ির পুকুরপাড় থেকে পুঁতে রাখা একটি একনায় বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছিল। পুলিশ জানায়, চলতি মাসেই নোয়াপাড়ায় এটি তৃতীয় অস্ত্র উদ্ধার অভিযান। এ মাসের ৭ তারিখে চৌধুরীহাট বাজারসংলগ্ন আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ির পেছনের পুকুর সেচে উদ্ধার হয়েছিল একটি চায়নিজ রাইফেল, একটি শটগান ও সাতটি গুলি। যেগুলো গত বছরের বলে দাবি যেগুলো গত বছরের ৫ আগস্ট রাউজান থানা একইভাবে গত সোমবার পলোয়ান পাড়া গ্রাম থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি এলজি, একটি রাইফেল ও ১১টি গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আলম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পলোয়ানপাড়ায় অভিযান চালিয়ে আসামি মো. শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে। তার বসতঘর তল্লাশি করে ৪টি দেশীয় তৈরী এলজি, ২টি কার্তুজ, ১টি কার্তুজের খোসা এবং ১টি খ্রিনট থ্রির গুলির খোসা উদ্ধার করে। এসময় পুকুর সেচে আসামির ফেলে দেয়া ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ৯ গুলি নভেম্বর ৪০ মামলার, আসামি মেজর ইকবালকে গ্রেপ্তার করে রাউজান থানা পুলিশ। ১৯ নভেম্বর রাউজানে র্যাব-৭, নৌ-পুলিশ ও ৯ এপিবিএন’র যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, এবং দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
নোয়াপাড়া, বাগোয়ান, পূর্ব ও পশ্চিম গুজরা, সুলতানপুর, কদলপুর, রাউজান ইউপি ও পৌরসভা এলাকায় যৌথ অভিযানে চৌকি বসিয়ে ১৭টি স্থানে যানবাহন ও সন্দেহভাজনদের চেক করা হয়। অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৮টি এলজি, ৬ রাউন্ড কার্তুজ, ১৪টি ছোরা, ৩টি রামদা, ২টি চাপাতি, ২টি তলোয়ার, ১টি কিরিচ ও একটি ইলেকট্রিক কাটার। বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব-৭-এর সমন্বিত অভিযানে আলাদাভাবে উদ্ধার হয় ৩টি এলজি, ২টি তলোয়ার ও একটি কিরিচ। এছাড়াও উদ্ধার অস্ত্রের তালিকায় রয়েছে ৪টি বিদেশি পিস্তল, ১টি রিভলভার, ১টি চায়না রাইফেল, ১টি শটগান, ২টি ২টি এলজি, ৮৫ রাউন্ড গুলি, ৭টি ম্যাগাজিন, রামদা, ৫টি ছুরি এবং একটি মোটরসাইকেল। গত ৩০ অক্টোবর র্যাব-৭ নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়েজ আহমদ চেয়ারম্যানের নতুন বাড়িতে বিশেষ অভিযান চালায়। এ সময় উদ্ধার হয় ১১টি একনলা বন্দুক, ১৫ রাউন্ড কার্তুজ, ৪টি চাইনিজ কুড়াল, ১০টি চাপাতি, ৮টি রামদা, ৯টি হকিস্টিক, ৬টি ছুরি, ৩টি হাতুড়ি, ৩টি করাত, ২ বক্স ফটকা বাজি, এক বোতল বিদেশি মদ ও ৫০ গ্রাম গাঁজা পাওয়া যায় সেখানে। গ্রেপ্তার করা হয় খায়েজ আহমদের ছেলে কামাল উদ্দিন (৪৯) এবং তার সহযোগী চাচাতো ভাই সোহেল আহমেদকে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর মাসেই রাউজান থানা এলাকায় ১০টি অস্ত্র মামলা রুজ, আটজন গ্রেপ্তার এবং ২৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৮৫ রাউন্ড গুলি ও ৩২টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইবনুর