
চন্দনাইশ উপজেলার শঙ্খ নদীর তীরবর্তী দোহাজারী, লালুটিয়া, পাহাড়ী এলাকা ধোপাছড়ি, পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ, পুরানগড়, আমিলাইশ, বাজালিয়া এলাকায় শঙ্খের চরে ও তীরে শীতকালীন রকমারি সবজি উৎপাদন হচ্ছে। চলতি মৌসুমে সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৮’শ মেট্টিক টন। গত অর্থ বছরে উৎপাদন হয়েছিল ৪৬ হাজার ৪৪৬ মেট্টিক টন। ফলে চলতি মৌসুমে প্রায় ২ হাজার মেট্টিক টন সবজি কম উৎপাদন হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সবজির বাজারে।
শীত মৌসুমে শঙ্খ নদীতে চর উঠে। কৃষকেরা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শঙ্খের পাড়ে এবং ভেসে উঠা চড়ে শীতকালীন বিভিন্ন বাহারি সবজি চাষ করে থাকে। শঙ্খের পাড়ের কৃষকেরা প্রতি বছর এ মৌসুমে নদীতে জেগে উঠা চড়ে বিভিন্ন প্রজাতির সবজির আবাদ করে চলেছে এবং তারা শীতকালীন সবজি বের করে চড়া মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। গত অর্থ বছরে চন্দনাইশে ২ হাজার ২৫৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৪৬ হাজার ৪৪৬ মেট্টিক টন। তৎমধ্যে রবি ফলন ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন হয়েছিল ১১ হাজার ৫৩০ মেট্টিক টন। সেই মৌসুমে দোহাজারী শঙ্খ তীরবর্তী এলাকায় ৮৮০ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন হয়েছিল ১৭ হাজার ৬৫০ মেট্টিক টন। রবি ফলনে ৪৪০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ১৩৪ মেট্টিক টন। চলতি মৌসুমে চন্দনাইশে ২ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৮’শ মেট্টিক টন। তৎমধ্যে রবি ফলন ২ হাজার ৩২৯ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৬৮০ মেট্টিক টন। দোহাজারীতে ৮৮০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৬’শ মেট্টিক টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ হাজার মেট্টিক টন উৎপান কম হবে।
কৃষকেরা জানান, শীত মৌসুমে শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু হওয়ার পাশাপাশি শঙ্খ নদীতে জেগে উঠা চড়ে সবজির আবাদে এখন তারা লাভের মুখ দেখছেন । কারণ শঙ্খ নদীর পাড়ে ও জেগে উঠা চড়ে সবজির ফলন ভালো হয়। জমির খাজনা দিতে হয় না কৃষকদের। ফলে দিন দিন বাড়ছে শীতকালীন সবজির আবাদ। এ সকল এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শঙ্খ নদীর উভয় পাড়ে, শঙ্খ নদীতে জেগে উঠা চড়ে কৃষকেরা সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। শঙ্খ নদীর পাড় যেন সবুজ চাদরে ডাকা মাঠ। সেখানে বেগুন, মুলা, কপি, বরবটি, শিম, ঢেড়সসহ বিভিন্ন শাক-সবজির চাষ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে শীত মৌসুমে শীতকালীন সবজি উৎপাদন করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে। যে সকল কৃষকদের বাড়ি নদীর পাড়ে তারা পাশ্ববর্তী নদীর পাড়ে সবজি চাষাবাদ করে থাকেন। আবার অনেকে নদীতে জেগে উঠা চড়ে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছে।
বর্তমানে শঙ্খ নদীর লালুটিয়া থেকে ধোপাছড়ি শেষ সীমানা পর্যন্ত শঙ্খ নদীর উভয় পাড়ে ও জেগে উঠা চরে বেগুন, লাউ, শিম, মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, টমেটোসহ বিভিন্ন প্রজাতির শাক শীতকালীন রকমারি সবজিতে ভরে গেছে শঙ্খ নদীর তীরবর্তী মাঠের পাশাপাশি দুই পাড় ও নদীর চর। কৃষক-কৃষনারীও অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছে সবজি ক্ষেত পরিচর্যায়। যেন অবসর নেই তাদের। কেউ সবজি ক্ষেতে নদী থেকে পানি তুলে সেচ দিচ্ছেন,কেউবা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। ক্ষেত থেকেই কৃষকেরা পাইকারী দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন সবজি। সেই সবজি প্রবেশ করছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন বাজারে। তাছাড়া এ সকল এলাকার কৃষকেরা সকালে সবজি ক্ষেত থেকে সবজি তুলে পার্শ্ববর্তী ঐতিহ্যবাহী কাঁচা বাজার দোহাজারী রেলওয়ে মাঠে প্রতিদিন সকালে নিয়ে আসে শীতকালীন সবজি।
দিয়াকুলের বেলাল উদ্দীন ও জাহেদুল ইসলাম জানান, শঙ্খ নদীর তীরবর্তী জমির পাশাপাশি শঙ্খ নদীর পাড়ের ভিতরের অংশে ও নদীতে জেগে উঠা চরে মৌসুমী শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করে তারা লাভবান হয়েছে। কারণ নদীর তীরবর্তী জমিতে খাজনা দিতে হয়, নদীর ভিতরের অংশের পাড়ে ও জেগে উঠা চরে খাজনা দিতে হয় না। তাছাড়া নদীতে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নতুনভাবে পলি পড়ার কারণে মাটি উর্বর থাকে। ফলে সবজি চাষ করতে সার তেমন দিতে হয় না।
তারা আরও বলেন, শীত মৌসুমে শঙ্খ নদীর পাড়ে ও চরে শীতকালীন সবজির মধ্যে বেগুন, মূলা, বরবটি, তিতকরল, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ভেন্ডী, ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, শিম, বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজির চাষ করা হয়। বর্তমানে পুরোদমে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ চলছে। বিশেষ করে হাইব্রিড সবজি চাষের কারণে খুব দ্রুত ফলন পাওয়ায় তারা সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে বলে জানান। এভাবে চলবে ২ থেকে ৩ মাস।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ আজাদ হোসেন বলেছেন, চন্দনাইশের শঙ্খনদী তীরবর্তী এলাকার পাশাপাশি শীত মৌসুমে শঙ্খ নদীতে জেগে উঠা চরে ও নদীর পাড়ের ভিতরের অংশে প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়। যা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম শহর এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলায় নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষকেরা শঙ্খ নদীর পাড়ে ও জেগে উঠা চরে বেশকিছু এলাকায় শীতকালীন সবজি সময়মত উৎপাদন করতে পারায় লাভবান হচ্ছেন। ফলে শঙ্খ নদীর তীরবর্তী এলাকার কৃষকরা সচ্ছল জীবনযাপন করতে পাচ্ছে।
পূর্বকোণ/আরআর