চট্টগ্রাম শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

সীতাকুণ্ডে পায়ে শিকল পরে স্কুলে পড়ছে ৮ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী!
সীতাকুণ্ডের মসজিদ্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে পায়ে শিকল দিয়ে হাঁটছে ৮ম শ্রেণির ছাত্র নাঈম

সীতাকুণ্ডে পায়ে শিকল পরে স্কুলে পড়ছে ৮ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী!

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

৫ নভেম্বর, ২০২৫ | ১২:৩২ অপরাহ্ণ

‘পায়ে শিকল পরে ধীরে ধীরে শ্রেণিকক্ষের দিকে যাচ্ছিল ৮ম শ্রেণির ছাত্র মো. নাঈম আহমদ সিরাহ (১৫)। এ দৃশ্য তাকিয়ে দেখছিল তার সহপাঠীসহ বিদ্যালয়ে আগত আরো অনেকেই। এক সময় ক্লাসে প্রবেশ করে সে। শেকল পরা অবস্থাতেই বেঞ্চে বসে ক্লাস শেষ করে। এভাবে বিদ্যালয়ের প্রতিটি দিন কাটে নাঈমের। ঘটনাটি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ছোটকুমিরা মসজিদ্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের।

 

শুধু নাঈম নয়, একইভাবে পায়ে শেকল পরে এ বিদ্যালয়ে প্রতিদিন ক্লাস করছে মোহাম্মদ বিন আমিন (১২) নামক ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রও। শুধু ক্লাসে পড়াশুনা নয়, স্কুল শেষ করে ছাত্রাবাসে থাকলেও তারা দুজনের পায়ে পরানো থাকে শেকল! আধুনিক যুগে এ ঘটনাটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হলেও জেল স্কুল খ্যাত এ বিদ্যালয় যেন এখনো নামের প্রতি সুবিচার করেই দুই ছাত্রকে অনেকটা জেলে বন্দী করে রেখেছেন। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি তারাও চান না ছাত্ররা এভাবে পড়াশুনা করুক। কিন্তু তাদের অভিভাবকদের অনুরোধেই এ ছাত্রদ্বয়কে পায়ে শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছে।

 

জানা যায়, ১৯৩০ এর দশকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা স্বর্গীয় জমিদার নিবারন চন্দ্র দাশ সীতাকুণ্ডের ছোটকুমিরায় বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জমিদান করেন। ১৯৩৮ সালে জহুরুল ইসলাম চৌধুরী নামক এক ব্যক্তির আর্থিক সহযোগিতায় সেই জমিতে ভবন নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়। স্কুলটি আবাসিক হওয়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে থাকে। বেশিরভাগ অবাধ্য ছেলেদের অভিভাবকরা এখানে এনে ভর্তি করাতেন। আনুমানিক ১৯৭০ সাল থেকে এ বিদ্যালয়ে অবাধ্য ছাত্রদের বাধ্য করতে পায়ে শেকল পরানো শুরু হয়। সেই থেকে স্কুলটি সারাদেশে জেল স্কুল নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু সময়ের সাথে নানান সমালোচনার কারণে ছাত্রদের পায়ের শেকল পরানো বন্ধ হয়। ফলে এখনো জেল স্কুল নামে চেনা হলেও বিগত বছরগুলোতে এখানে ছাত্রদের পায়ে শেকল পরানোর দৃশ্য দেখা যায়নি।

 

তবে পুরোনো সেই স্মৃতি এবার আবার সামনে এসেছে ৮ম শ্রেণির ছাত্র নাঈম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ বিন আমিনের পায়ে শেকল পরানোর ঘটনায়। এ দুই ছাত্রের বাড়ি ফেনী। এভাবে পায়ে শেকল পরে থাকতে ভালো লাগে না বলে জানায় ছাত্রদ্বয়। তারা বলেন, মা-বাবারা এভাবে শেকল দিয়ে পড়াতে বলেছেন। তাই স্কুল থেকে শেকল পরিয়ে রাখে।

 

একই কথা বলেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলী নেওয়াজ। তিনি বলেন, একসময় এ স্কুলকে জেল স্কুল বলা হতো। সে সময় অমনোযোগী, অবাধ্য এবং স্কুল পলাতক ছেলেদেরকে পায়ে শিকল পরিয়ে পাঠদান দেওয়া হতো। তবে বর্তমানে এ নিয়ম নেই। কিন্তু অভিভাবকদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে পায়ে শিকল পরে দুইজন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।

 

তিনি বলেন, এই ছাত্ররা আগেও এ বিদ্যালয়ে পড়েছে। তাদের পড়ায় মনযোগ নেই, তারা মোবাইল ও নানান নেশায় আসক্ত। কিছুদিন আগেও স্কুল থেকে পালিয়ে চলে যায়। তাই তাদের অভিভাবকরা নিজে শেকল কিনে নিয়ে এসে লিখিতভাবে আবেদন করায় আমরা বাধ্য হয়ে এভাবে পড়াচ্ছি।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট