
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে রিসোর্ট বিক্রির হিড়িক পড়েছে। ট্যুরিজম ব্যবসায় ভর করে জীবিকা নির্বাহ করা স্থানীয়রা এখন একের পর এক হোটেল, রিসোর্ট ও ভিটেমাটি বিক্রি করে দ্বীপ ছাড়ছেন।
স্থানীয়দের মতে, একসময় মাছ ধরা ও পর্যটন ব্যবসাই ছিল তাদের আয়ের মূল উৎস। পর্যটনে ভালো আয় হওয়ায় অনেকেই রিসোর্ট নির্মাণে বিনিয়োগ করেন। তবে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনায় গত বছর থেকে পর্যটক সীমিতকরণে বিপাকে পড়েন দ্বীপবাসী।
নভেম্বর থেকে দ্বীপে পর্যটক যাতায়তের অনুমতি মিললেও রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় পর্যটন কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। কক্সবাজার থেকে টানা ছয় ঘণ্টা নৌপথে এসে মাত্র দুই ঘণ্টা অবস্থান করে ফেরত যাওয়া পর্যটকদের জন্য এ ভ্রমণ ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। ফলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে পর্যটকের পদচারণা প্রায় শূন্য ছিল।
পরে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দুই মাসের জন্য সীমিত পর্যটক যাতায়ত ও রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হলেও এত স্বল্প সময়ের আয় দিয়ে পুরো বছর সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল মালেক অভিযোগ করে বলেন, সরকার একদিকে পর্যটক সীমিত করে আমাদের জীবন-জীবিকা বন্ধ করে দিয়েছে, অন্যদিকে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়ে কিছু ত্রাণ দিয়ে দায় সেরেছে। এটা অনেকটা প্রতারণার শামিল।”
সেন্টমার্টিন হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুর রহিম জিহাদী বলেন, দ্বীপের মানুষকে পর্যটন বিমুখ করতেই এমন পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা রিসোর্ট কেনার জন্য আগ্রহ দেখাতেন, এখন স্থানীয়রাই নিজেদের ভিটেমাটি বিক্রি করে দ্বীপ ছাড়ছেন।
তবে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়তের অনুমতি দেওয়া হবে। রাত্রিযাপনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সেন্টমার্টিন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবুল হোসেন জানান, তিনি ২০১৭ সালে ২০ শতক জমিতে ‘দ্বীপ কুটির’ নামে একটি রিসোর্ট গড়ে তোলেন। কিন্তু গত বছর থেকে পর্যটক সীমিত হওয়ায় আয় বন্ধ হয়ে পড়েছে। পরিবারের ব্যয় মেটাতে বাধ্য হয়ে রিসোর্ট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এক বছরেও সরকার দ্বীপবাসীর জন্য কোনো টেকসই বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করেনি। এখন অনেকে সংসার চালাতে স্ত্রীর গয়না পর্যন্ত বিক্রি করছেন।
পূর্বকোণ/পারভেজ