
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে নতুন করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলায় আবারও সমালোচনার মুখে পড়েছে জেলা প্রশাসন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে হাইকোর্টের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানে খোদ প্রশাসনই কীভাবে এসব স্থাপনার জন্য গোপনে অনুমতিপত্র দিল?
গত শুক্রবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে একই নকশার সারি সারি দোকান বসানো হয়। এসব স্থাপনা নির্মাণকারীদের দাবি, তাদের হাতে জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেল থেকে দেওয়া অনুমতিপত্র রয়েছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। এরপরই রবিবার দুপুরে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান বলেন, “নতুন দোকান বসানো হয়েছে, সত্যতা পেয়েছি। এগুলো সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন যে নির্মাণকারীদের কাছে প্রশাসনের অনুমতিপত্র রয়েছে, তবে সেই অনুমতিতে শর্ত আছে যে প্রয়োজনে প্রশাসন তা বাতিল করতে পারবে।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সাংঘর্ষিকঃ
কক্সবাজারের পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, সৈকতকে ‘পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা’ (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে হাইকোর্ট সেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বা ব্যবসা পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এর পরেও প্রশাসনের অনুমতি দেওয়া আদালতের আদেশ অমান্য করার সামিল। বাপার জেলা সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, “এমন সাংঘর্ষিক পদক্ষেপে আসলে কারা দায়ী? আর আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে অনুমতি দেওয়া হলো, তার জবাবদিহি কে করবে?”
প্রশাসনের বিব্রতকর অবস্থা ও হুশিয়ারিঃ
একদিকে অনুমতি দেওয়া, অন্যদিকে উচ্ছেদ অভিযান চালানো—এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহেদুল আলম নিজেও বিব্রত বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা বিব্রত। একদিকে অনুমতি দেওয়া, আবার রাতারাতি দখল হয়ে যাওয়া এটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনাঃ
পর্যটকদের চলাচলের পথ বন্ধ করে এবং সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করে রাতের আঁধারে এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, “আমাদের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু রাতের আঁধারে সৈকত দখল কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।” তিনি আরও জানান, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এসব স্থাপনা দ্রুত সরাতে ট্যুরিস্ট পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে সমন্বিতভাবে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) উচ্চ আদালতের রায় অমান্য করে সমুদ্র সৈকতে বালিয়াড়ি দখল এবং নতুন স্থাপনা নির্মাণ করায়
পরিবেশ সচিবসহ ৮ জনকে আইনি নোটিশ দিয়েছে বেলা।
সাংবাদিকদের আপেল মাহমুদ আরও বলেন, যদি ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১২ টার আগে বালিয়াড়িতে স্থাপনা না সরালে তা উচ্ছেদ অভিযানে সরিয়ে নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। কক্সবাজারের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলছেন, যদি এবার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, যা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে চিরতরে ধ্বংস করে দেবে।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ