
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন খাল ও হালদা নদীর সংযোগ অংশে বিষ প্রয়োগ করে নির্বিচারে মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, রাতের আঁধারে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নদী ও খালে বিষ ঢেলে মাছ মেরে সকালে তা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছে।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর নাজিরহাট, রোসাঙ্গিরি ও লেলাং অংশের তেলপাড়ি-কাটাখালি খাল, ধুরুং খালের পাইন্দং অংশ, ভূজপুর রাবারড্যাম সংলগ্ন এলাকা এবং যোগিনীঘাটা এলাকায় নিয়মিত এভাবে মাছ নিধন চলছে।
মাইজভান্ডার সংলগ্ন কাটাখালি খাল অংশের বাসিন্দা বাবুল জানান, লেলাং রোসাংগিরী ও নাজিরহাট পৌরসভার বাসিন্দারা চলতি সময়ে কাটাখালি খালে জাল এবং কিনারায় হাত দিয়ে মাছ শিকার করেন। খালে প্রচুর চিংড়ি মাছ পাওয়া যায়। সম্প্রতি কে বা কারা উজানে বিষ দিচ্ছে। ফলে মাছগুলো কিনারায় এসে মরছে।
নাজিরহাটের স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবুল খায়ের জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন করছে। অন্যদিকে যোগিনীঘাটের নুরুল আলম অভিযোগ করেন, হালদায় মাছ শিকার নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের চোখের সামনে দিন-রাত বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধ্বংস করা হচ্ছে।
এদিকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে হালদার প্রাকৃতিক মাছের বংশবিস্তার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়লেও উপজেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই এই চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা নদী গবেষক ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, বিষ প্রয়োগ করে মাছ মারাটা খুবই ক্ষতিকর একটা বিষয়। শুধু শাখা খালের জন্য না, আমাদের দেশের নদীর জীববৈচিত্র ও মাছ শূন্য হওয়ার পিছনের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন। মাছ মারার জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা অবৈধ, অনৈতিক এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে, বহু প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মেরে ফেলে, এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
Rooten / Rotenone (রুটেন বা রোটেনন) বা Fast Action / Fast Traction। এটি পানিতে দিলে খুব দ্রুত মাছের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সহজে মারা যায়। অনেকে এটিই অবৈধভাবে খালে বা নদীতে মাছ মারার জন্য ব্যবহার করে।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আজিজুল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি জেনে তদন্তের জন্য লোক পাঠিয়েছেন। এতে বিষ প্রয়োগে মাছ মরছে এ ব্যাপারে সত্যতা পাওয়া গেছে। কারা এ অন্যয়ের সাথে তা তদন্ত করে বের করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ