
‘ক্লু-লেস’ অপহরণ ও হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। চক্রটি একটি মুরগির খামারে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রাঙ্গামাটির সুজন চাকমা নামের এক যুবককে কক্সবাজারের টেকনাফে নিয়ে আসে এবং মুক্তিপণের জন্য নির্মম নির্যাতন করে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ফেলে গেলে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) র্যাব-১৫ এর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৯ আগস্ট সুজন চাকমা চাকরি পাওয়ার আশায় রাঙ্গামাটি থেকে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হন। ৩০ আগস্ট সকালে তিনি টেকনাফের শাপলা চত্বরে পৌঁছালে অটোরিকশা চালকসহ অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তাকে রিসিভ করে নির্জন পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানেই তার পরিবারের কাছে ৬ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, যথাসময়ে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে অপহরণকারীরা সুজনকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে সুজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় টেকনাফ পৌরসভার শাপলা চত্বরে ফেলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ সেপ্টেম্বর সুজন চাকমার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হলে র্যাব-১৫ ছায়া তদন্ত শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে র্যাব গত ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় টেকনাফ থেকে প্রথমে অপহরণকারী চক্রের সদস্য মো. ইয়াছিন ওরফে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও ভুক্তভোগী সুজনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের আরও দুই সদস্য, অটোরিকশা চালক মো. ইয়াছিন ওরফে কালু এবং মূল হোতা সাহাব উদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সহজ-সরল মানুষকে চাকরি বা বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. কামরুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জেলার চাকরিপ্রত্যাশীদের সতর্ক করে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে আসা আকর্ষণীয় চাকরির প্রস্তাবের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য সকলেরই সচেতন থাকা উচিত।
পূর্বকোণ/এরফান/পারভেজ