চট্টগ্রাম সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি রাঙামাটির ফারুয়ায়
রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার রাইখং খালের পাড়ে দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়ন

বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি রাঙামাটির ফারুয়ায়

মো. আজগর আলী খান, ফারুয়া থেকে ফিরে

৩০ আগস্ট, ২০২৫ | ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ডিজিটাল যুগেও মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুতের আওতায় আসেনি রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম। এই ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করছে। নেই কোন মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২১টি। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় যুগের সাথে তাল মেলাতে পারছে না এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে সবকিছু ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে, নাগরিক সেবা অনলাইনের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। যাতে প্রত্যেক নাগরিক খুব সহজে ঘরে বসে সেবা পায়। কিন্তু এ ইউনিয়নের মানুষ এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন এই ফারুয়া ইউনিয়ন; প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এখানে বসবাস করছে। এখানে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম কৃষিকাজ। দিনে এনে দিনে খাওয়া এসব মানুষকে দেখলে মনে হওয়ার কোন অবকাশ নেই যে এরা বাংলাদেশের মানুষ। একে তো দুর্গম আর পশ্চাৎপদ এলাকা, অন্যদিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ নেই। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কৃষক তার ফসলি জমির যেকোন সমস্যায় কৃষি বিশেষজ্ঞ কিংবা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার পরামর্শ পান না। সেক্ষেত্রে তাকে বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে আসতে হয়। দেশ ডিজিটাল হচ্ছে। মোবাইলফোন, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎসেবা এখন পৌঁছে গেছে ঘরে ঘরে। অথচ কাল্পনিক মনে হলেও বাস্তব যে, এই ইউনিয়নটিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ নেই। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সারাদেশে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করেছে। এখানকার শিশুরা ছিল নেটওয়ার্ক থেকে বঞ্চিত।

 

স্থানীয় অভিভাবকদের দাবি, তাদের সন্তান যেন অত্যন্ত জরুরি নেটওয়ার্কের এই সুবিধাটি পায়। এছাড়া কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও নেই মোবাইল নেটওয়ার্কের সুবিধা। সারা বাংলাদেশের মানুষ যেখানে ঘরে বসে ডিজিটাল সুবিধা পাচ্ছে, সেখানে এসব এলাকার ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনসাধারণ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

 

ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন শতভাগ করার জন্য সরকার থেকে নির্দেশনা আসে; কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে আমরা এই জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সঠিকভাবে করতে পারছি না। প্রতিবন্ধী ভাতা, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পেমেন্ট করা হয়। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় এদের ভাতা ঠিকমতো পায় না।

 

তিনি বলেন, ইউনিয়নটি অতি দুর্গম হওয়ায় অন্যান্য ইউনিয়ন থেকে উন্নয়নে পিছিয়ে আছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সহজে যোগাযোগ করা যায় না। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে ফারুয়া ইউনিয়নের সেবাদানের লক্ষ্যে সরকার যাতে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপন করে দেয় সেজন্য ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, দুর্গম এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ই-লার্নিং ও আধুনিক শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০০টি বিদ্যালয়ে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগ চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ উদ্যোগে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত এক বিপ্লব হবে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকার শিক্ষার্থীরা অনলাইনে শহরের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ক্লাসে অংশ নিতে পারবে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট