চট্টগ্রাম সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

পরের জমিতে জমিদারি
চাম্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া ১৪টি দোকান

পরের জমিতে জমিদারি

নিজস্ব সংবাদদাতা, লামা-আলীকদম

২৮ আগস্ট, ২০২৫ | ১২:০৮ অপরাহ্ণ

বান্দরবানের লামা উপজেলায় চাম্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় ১৪টি দোকান জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতার ভগ্নিপতিসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থিত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জমি জবরদখল করে রেখেছে।

 

প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ শতক জমি দখলদারদের হাতে। তারা গত ৩৩ বছর ধরে দোকান তৈরি করে তাতে ব্যবসা করছেন। একমাত্র মো. কামাল হোসেন বিদ্যালয়কে নিয়মিত ভাড়া দেন। এছাড়া বাকি ১৩টি দোকানের তিন ভাড়াটিয়া বিগত সময়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সামান্য ভাড়া দিতেন, কিন্তু গত ৮-৯ বছর ধরে সেটাও দিচ্ছেন না। প্রায় ১ বছর হলো আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে গেলেও এখনো তাদের দোসররা এইসব অবৈধ দখল ছেড়ে দেয়নি।

 

জানা যায়, ৩০৭ নং চাম্বি মৌজার ১৮ নং খতিয়ানের দাগ নং ১৯২, ১৯৩ দাগাদির আন্দর ৯৮ শতক জমির উপর তৈরি করা হয়েছিল বিদ্যালয়টি। বর্তমানে প্রায় ৮শত ছাত্রছাত্রী ও ৯ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে এটি। বিদ্যালয়ের জমির উপর নির্মিত পাকা, সেমিপাকা জবর-দখলকৃত দোকানঘরগুলো আজও আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের ভগ্নিপতি এইচ এম আবু জাহাঙ্গীর চৌধুরী প্রকাশ কালা জাহাঙ্গীরসহ অনেকের দখলে।

 

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বিগত সময়ে স্কুলের এসএমসি কমিটির সভাপতি থাকাকালীন নিজের মর্জিমত নামমাত্র ভাড়ায় তার ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীরকে ৪টি দোকান ভাড়া দেখান। যাতে প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষর করেননি। ভাড়া চুক্তি করলেও তিনি কখনো স্কুলকে ভাড়া দেননি। গত ৫ আগস্টের পর চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন পলাতক হলেও উদ্ধার হয়নি বিদ্যালয়ের জমি।

 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৩টি দোকান প্লটের মধ্যে এইচ এম আবু জাহাঙ্গীর ৪টি, জাহানারা বেগম ১টি, যুব উন্নয়ন সমিতি ২টি, মো. জাকারিয়া ১টি, আব্দুল লতিফ ২টি, মো. নাজিম উদ্দিন ১টি, রফিক আহমদ ১টি এবং বিএনপি কার্যালয় নামে ১টি দোকান জবরদখল করে রেখেছেন। এসব দোকান তারা উপ-ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে নিয়মিত টাকা নিচ্ছেন।

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, স্কুলের জায়গায় অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ এবং দখলদারদের উচ্ছেদে সাবেক প্রধান শিক্ষকরা, বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং আমি (বর্তমান প্রধান শিক্ষক) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ৪২টি চিঠিপত্র প্রেরণ করেছি। কোন সুরাহা হয়নি।

 

লামা উপজেলা শিক্ষা অফিসার দেবাশিষ বিশ্বাস বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে আমার চেয়ে বড় বড় লোক মাথা ঘামাচ্ছে। জেলা পরিষদের মাসিক মিটিংয়েও এই বিষয়টি উঠেছে। এখনো সুরাহা হয়নি।

 

এদিকে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রধান শিক্ষকের লিখিত আবেদনের জেরে লামা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করেন। তিনি বলেন, সরেজমিনে বিদ্যালয়ের জবরদখলের তদন্তকাজ শেষ করেছি। তাতে জবর দখলের সত্যতা মিলেছে। আমি তদন্ত রিপোর্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জমা দিয়েছি।

 

লামা উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. মঈন উদ্দিন জানান, তদন্ত রিপোর্টে স্কুলের জায়গা জবরদখলের সত্যতা পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে বিধি মোতাবেক জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট