চট্টগ্রাম সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

মহেশখালীর পাহাড়ি অরণ্যে ‘অস্ত্রের মেলা’
ছবি: সংগৃহীত

মহেশখালীর পাহাড়ি অরণ্যে ‘অস্ত্রের মেলা’

এ.এম হোবাইব সজীব, মহেশখালী

২১ আগস্ট, ২০২৫ | ১২:০৬ অপরাহ্ণ

দেশের একমাত্র পাহাড়িদ্বীপ উপজেলা কক্সবাজারের মহেশখালীতে যেন ‘অস্ত্রের মেলা’ বসেছে। নতুন-পুরাতন অস্ত্রের কারিগর কারবারিরা মিলে দৈশিয় অস্ত্রের চাহিদা ভেবে গহীন পাহাড়ের ভ্রাম্যমাণ অস্ত্রের কারখানায় এই মেলার আসর বসিয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্ত্রের চাহিদা ভেবে নতুন করে অস্ত্র তৈরিতে নেমেছে আত্মগোপনে থাকা মহেশখালীর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের একাধিক গ্রুপ ও কারিগর। মূলত তারাই পাহাড়কে নিরাপদজোন হিসেবে বেছে নিয়ে সেখানে আস্তানা গেড়েছে।

 

জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘন ঘন অভিযানের কারণে দ্বীপের পরীক্ষিত অস্ত্র কারিগররা মহেশখালী ছেড়ে দীর্ঘদিন অন্যত্রে আত্মগোপনে থাকলেও সম্প্রতি একপক্ষ কাল ধরে অবস্থান করছে এলাকায়। হাত দিয়েছে নতুন করে অস্ত্র তৈরির কাজে। উপজেলার অস্ত্র তৈরির স্বর্গরাজ্য হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত কালারমারছড়া বাজারের পূর্বপাশে ফকিরজুম পাড়ার গহীন পাহাড়ের গোলাইল্যা জিরি এলাকা, নোনাছড়ি ও আঁধার ঘোনা মিজ্জির পাড়া পাহাড়, শাপলাপুর ইউনিয়নের জেমঘাট পাহাড়ি এলাকা, বড় মহেশখালীর বড় ডেইল পাহাড়সহ পাহাড়ের চূড়ায় প্রায় ৪/৫ স্পটে অস্ত্র তৈরির ভ্রাম্যমাণ কারখানা গড়েছে। ফলে অস্ত্র তৈরির আবারও ধুম পড়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এসব পাহাড়ে অস্ত্রের কারিগর/সন্ত্রাসীরা হাতে বন্দুক নিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

 

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কালারমার ছড়ায় যৌথ বাহিনীর সোর্স পরিচয়ধারী পাহাড়ে অবস্থান করা আনসার ডাকাতের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। ভিডিও কলে আরেক ডাকাত ছোট তারেককে বিভিন্ন ধরনের একাধিক অস্ত্র দেখানো হচ্ছে, একইভাবে তারেক ডাকাতও আনছারকে ভিডিও কলে দেখানো অস্ত্রের ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়- উপজেলার কালারমারছড়ার নোনাছড়ি সীমান্ত এলাকার ছামিরাঘোনার মো. ইসমাইলের ছেলে আনসার ভিডিও কলে ডাকাত তারেককে পাহাড়ে অস্ত্রের কারখানায় তৈরিকৃত বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র প্রদর্শন করছে। এসময় অস্ত্র সরবরাহ ও সংগ্রহ, ডাকাতির পরিকল্পনা, মারামারি এবং পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে থাকার বিষয়েও কথোপকথন হতে শোনা যায়।

 

অন্যদিকে, তারেক নামের আরেক ডাকাত ও সন্ত্রাসীর একই ধরনের আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ফলে পরপর দুই সন্ত্রাসীর একাধিক অস্ত্রসহ ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সুকৌশলে সংগ্রহ করা আরেকটি ছবিতে দৈশিয় অস্ত্র লম্বা বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে অস্ত্রের কারিগর মফিজ। তাদের গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।

 

এদিকে অস্ত্রের ভিড়িও ভাইরাল হওয়ার পর কালারমারছড়া ছামিরা ঘোনার তারেকের আস্তানায় এরিমধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তার বড় ভাই উকিল আহমেদকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীদের সোস হিসেবে সঙ্গে নিয়ে অভিযান করায় পুলিশের চলমান অভিযান প্রশ্মবিদ্ধ হচ্ছে। তবে সন্ত্রাসী উকিল আহমেদ গ্রেপ্তারে জনমনে স্বস্তি ফিরেছে।

 

মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনজুরুল হক জানান, অস্ত্রের কারিগরও সন্ত্রাসীরা যাথে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য পুলিশ টহল জোরদার রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু অস্ত্র উদ্ধারও করা হয়েছে। তিনি অস্ত্র তৈরির মুল স্পটে খবর নিয়ে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান।

 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসিম উদ্দিন জানান, পুলিশ তৎপর রয়েছে অস্ত্র ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের আটক করতে। তবে এলাকার লোকজন সহযোগিতা করলে অস্ত্রের কারখানা যদি তাকে মূলস্পটে অভিযান চালানো হবে।

 

চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি মোহাম্মদ আহসান হাবিব পলাশ জানান, মহেশখালীতে নতুন ওসিকে নির্দেশনা দাওয়া আছে অপরাধীদের আটক করতে। পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করেছে। অস্ত্রধারী যেই হোক না কেন, আইনের আওতায় আনা হবে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট