চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

রাউজানে সাতদিন ধরে ডুবে আছে ৩০ গ্রাম
রাউজানে জোয়ারের পানি ডিঙিয়ে স্কুল হতে বাড়ি ফিরছেন শাহমহালদার পাড়ার ছেলেমেয়েরা

রাউজানে সাতদিন ধরে ডুবে আছে ৩০ গ্রাম

জাহেদুল আলম, রাউজান

১৩ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট খোলার পর টানা সাতদিন ধরে ডুবে আছে হালদা ও কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী রাউজানের নোয়াপাড়া, উরকিরচর, বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরা ও আশপাশের অন্তত ৩০টি গ্রাম। গতকাল মঙ্গলবার বাঁধের জলকপাট বন্ধ করলেও এলাকাগুলো এখনও কোমর ও হাঁটুসমান পানির নিচে, স্বাভাবিক হয়নি জীবনযাত্রা।

 

জানা যায়, কয়েকদিনের প্লাবন, কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট খুলে দেয়ায় ডুবে গেছে মাঠঘাট, রাস্তা, পুকুর-ডোবা, খালবিল; নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার ফসল ও মাছ। পানির নিচে রাস্তার চিহ্ন না থাকায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা; বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থান। 

 

জোয়ারের তীব্র স্রোতে অনেক পরিবারের চাল-চুলা ভেসে গেছে, ভেঙে পড়েছে রাস্তাঘাট। বর্ষা মৌসুমে পূর্ণিমা-অমাবস্যার জোতেও গ্রামগুলো প্রায়ই পানিতে তলিয়ে যায়; কখনও দিনের বেলায়, কখনও গভীর রাতে ডুবে যায় রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল, এমনকি বসতঘর।

 

সামমহালদার পাড়ার জোহরা বেগম বলেন, পানির কারণে চুলা জ্বালাতে পারছি না। কয়েকদিন ধরে দুপুরে রান্না হয় না, উপবাসে দিন কাটাচ্ছি। মাঝরাতে জোয়ারের পানিতে খাটের নিচে পানি উঠে যায়, ঘুমাতে পারি না। এখনও কোন সহায়তা পাইনি। অটোরিকশাচালক তৈয়বের অভিযোগ, জোয়ারের স্রোতে রাস্তাগুলো ভেঙে গেছে, গাড়ি চলাচল বন্ধ। চাষের জমি পানিতে ডুবে গেছে, সব ফসল পচে নষ্ট। আমরা খাবার চাই না, আমাদের বেড়িবাঁধ দিন।

 

পশ্চিম নোয়াপাড়ার জামাল উদ্দিন বলেন, চলাচলের একমাত্র রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না, রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়রা সাঁকো বানালেও নারী ও শিশুদের পক্ষে তা পার হওয়া সম্ভব নয়। মোকামী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী এসএম শওকত জানান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসেন। সোমবার ছুটির পর জোয়ারের পানিতে এক ছাত্র পুকুরে পড়ে গেলে শিক্ষকরা উদ্ধার করেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে জোয়ারে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়; দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ভাটায় পানি নামে। রাতেও একই অবস্থা হয়, ফলে মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ে।

 

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের মধ্যে রয়েছে- নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম নোয়াপাড়া, মোকামীপাড়া, সামমহালদারপাড়া, ছামিদর কোয়াং, কচুখাইন, দক্ষিণ নোয়াপাড়া, উরকিরচর ইউনিয়নের মইশকরম, সওদাগরপাড়া, সুজারপাড়া, পূর্ব উরকিরচর, খলিফার ঘোনা, সাকর্দা, হারপাড়া, বৈইজ্জাখালি, পশ্চিম গহিরা, কাগতিয়া, পশ্চিম গুজরা, বাগোয়ানের অংশবিশেষ এবং হাটহাজারীর বাড়িঘোনা। প্লাবনে আমন ধান ও সবজির ক্ষেতসহ শত শত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। নদীর তীরে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর বর্ষায় একই দুর্দশা হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

 

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ বলেন, প্লাবিত ইউনিয়নগুলোতে এক মেট্রিকটন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, মাস্টার রোলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। শুকনো খাবারও বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। তিনি জানান, রাউজান অংশে মদুনাঘাট থেকে লাম্বুরহাট পর্যন্ত ২ হাজার ১৬৫ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একনেক সভায় অনুমোদন পেলে চলতি অর্থবছরেই কাজ শুরু হবে।

 

গ্রামবাসীর দাবি, স্থায়ী বেড়িবাঁধ ছাড়া এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলবে না। তাদের মতে, বছরের প্রায় তিন থেকে চার মাস কোমরসমান পানিতে ডুবে থাকে গ্রামগুলো; ক্ষতিগ্রস্ত হয় বসতবাড়ি, রাস্তা ও ফসলের জমি। আর এই পরিস্থিতি বদলানো এখন সময়ের দাবি।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট