চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

দ. কাট্টলী প্রাণহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান
দক্ষিণ কাট্টলী প্রাণহরি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান

দ. কাট্টলী প্রাণহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান

মিটু বিভাস

১০ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ কাট্টলী প্রাণহরি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গেটের সামনে সন্তানের ছুটির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন সেবিকা দাস। অপেক্ষার মধ্যে আছে আতঙ্কও। কারণ স্কুলের তিনটি ভবনের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতেই চলছে সন্তানের পাঠদান। তার মত আরও অনেক অভিভাবকও সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন। অথচ বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে বছর দুয়েক আগে নির্মিত হয়েছে আরও একটি নতুন ভবন। কিন্তু ভবনটি দুই বছরেও বুঝে পায়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া নতুন ভবনে নেই শিশু শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে ঝুঁকি নিয়ে পুরোনো ভবনে চলছে অনেক শিক্ষার্থীর পাঠদান।

 

প্রায় দেড়শ বছর আগে ১৮৮৮ সালে স্থাপিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১,৮২৮ জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য রয়েছে তিনটি ভবন। এর মধ্যে কবি নজরুল ও মঞ্চ ভবনে কোন ক্লাসরুম খালি নেই। আর ১৯৮৮ সালে ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ নির্মিত কবি জসিম উদ্দিন ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। উঠে গেছে ক্লাস রুমের দেয়ালের রং। খসে পড়ছে পলেস্তারা। ঝুঁকি নিয়েই ভবনের ১৫টি রুমে চলছে পাঠদান।

 

২০২৩ সালে এই স্কুল থেকে অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক জামাল আহমেদ বলেন, ২০২০ সালের আগে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপর এলজিইডি সাইক্লোন সেন্টারের আদলে নতুন এ ভবনটি নির্মাণ করে। যার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের ব্যবস্থা। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় ভবনটি বুঝে নেয়া হয়নি। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ভবনটির নীচতলায় উন্মুক্ত স্থানে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গ্রিল স্থাপন করে। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় শ্রেণিকক্ষ আগের মতোই অরক্ষিত থেকে যায়। রেলিং থাকলেও উপরে লোহার গ্রিল নেই। যা শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

 

বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে নতুন ভবনের গ্রিল স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত দেড়মাস আগে থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে আবেদন করেছিলাম। এরপর তিনি বার্ষিক স্লিপ (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান) ফান্ডের টাকা থেকে গ্রিল স্থাপনের জন্য অনুমতি দিয়েছেন।

 

বার্ষিক প্রদত্ত একলক্ষ টাকা স্লিপে ভ্যাট ও অন্যান্য কর কেটে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। বার্ষিক স্লিপের এই টাকায় ছোটখাট মেরামত থেকে শুরু করে শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ, পরীক্ষার খরচসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। এছাড়া গ্রিল নির্মাণ করতে গেলে খরচ পড়বে এর চেয়েও বেশি। এছাড়া ভবনটি বুঝেও পায়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

এসব বিষয় জানতে চেয়ে থানা শিক্ষা অফিসার রূপাঞ্জলী করের মোবাইলে একাধিক দিনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান বলেন, স্লিপ ফান্ডের টাকা দিয়ে নতুন বিল্ডিংয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। আর ভবনটিও সম্ভবত বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। পুরো বিষয়টি নিয়ে থানা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

অভিভাবকদের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই গত ৫ বছর ধরে ক্লাস চলছে। স্কুল ছুটি হলে সব শিক্ষার্থী একসাথে যখন বের হয় তখন ভবনটি যেন কাঁপতে থাকে। গত কয়েকদিন আগে ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীদের মাথায় পলেস্তারা ভেঙে পড়েছে, এরপর ঐ রুমে ক্লাস নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে অভিভাবকরা দ্রুত নতুন ভবনটি শিশুদের উপযোগী করে গড়ে তুলে ক্লাস স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট