
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের রেকর্ড ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে বহু বাড়ি-ঘর, অসংখ্য গ্রাম্যসড়ক, প্রচুর ফসলি জমি, মৎস্য ও পোল্ট্রি খামার। ফলে পানি নেমে গেলে কোটি কোটি টাকার সম্পদহানির আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে টানা বৃষ্টিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশেষত গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দিনভর বৃষ্টিপাতে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বেশিরভাগ গ্রাম জলমগ্ন হয়ে হাজার হাজার বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে যায়। এতে রান্নাবান্না বন্ধ হওয়ায় খাবারের ব্যবস্থা করতে দিশেহারা হয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া গ্রামের সড়ক ডুবে গিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবী মানুষ হয়ে পড়েন ঘরবন্দী। তলিয়ে যায় ১০ হাজার একরেরও বেশি ফসলি জমি। ফলে কোটি কোটি টাকার ফসলহানির আশংকা করছেন কৃষকরা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর,বারৈয়াঢালা, মুরাদপুর, পৌরসভা, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারী ও সলিমপুর এবং পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে গেছে।
বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বহরপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল খায়ের জানান, এলাকার খাল দীর্ঘদিন সংস্কার না থাকায় প্রবল বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসলি জমি, গ্রাম্যসড়ক ও বাড়ি-ঘর তলিয়ে আছে। এতে অনেকে রান্নাবান্না করতে পারেননি। বিকল্প উপায়ে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তারা। গ্রামের সড়কগুলো তলিয়ে থাকায় স্কুলের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ কোথাও বের হতে পারেননি। সীতাকুণ্ড পৌরসদরের নামার বাজারের বাসিন্দা অনন্যা বড়ুয়া বলেন, আমাদের বাড়ি পৌরসদরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে। অথচ এই সড়কটি প্রতি বর্ষায় পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এবারও এটি তলিয়ে যাবার পাশাপাশি সেই পানি আমাদের ঘর-উঠোন সব প্লাবিত করেছে। দূষিত এসব পানির কারণে শরীরে এলার্জি দেখা দিয়েছে।
এছাড়া রান্না, চলাফেরা খুবই কষ্টকর হয়ে গেছে। এদিকে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণও। এখানে অবস্থিত রাস্তা, ইউএনওর বাংলোর নিচ তলাতেও পানি ঢুকে পড়েছে। এভাবে হাজার হাজার বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে জনজীবন চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
সৈয়দপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, তার ১০০ শতক জমিতে রয়েছে ঝিঙ্গা,বরবটি ও কাঁকরোলের চাষ। এখন পুরো জমি পানিতে তলিয়ে আছে। এই পানি কয়েকদিন স্থায়ী হলে আমার মতো হাজার হাজার কৃষকের সব ফসল নষ্ট হয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হবে। সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ জানান, বৃষ্টিতে সবকটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নিম্মাঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত। এই পানি দ্রুত না নামলে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হবেন কৃষক।
সীতাকুণ্ড আবাহাওয়া অফিসের আবাহাওয়াবিদ হাসানুজ্জামান বলেন, গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সীতাকুণ্ডে চট্টগ্রাম বিভাগের রেকর্ড ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময়ে আরো তিন দফায় যথাক্রমে ২৯ মিলিমিটার, ১৬ মিলিমিটার ও ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রবল বৃষ্টিতে আশ্রয়ন প্রকল্পসহ পৌরসভা ও নিম্মাঞ্চলের বহু বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে। ফসলি জমি ও গ্রাম্য সড়ক পানিতে তলিয়ে আছে। দ্রুত পানি না নামলে এসব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে অনেক বৃষ্টি হলেও পাহাড় ধস বা বড় ধরনের কোন অঘটন ঘটেনি।
পূর্বকোণ/সৌমিত্র/আরআর/পারভেজ