চট্টগ্রাম সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

পাহাড়ের ঢালুজুড়ে সারি সারি গাছে রঙিন রাম্বুটান
নিজ বাগানের গাছে ধরা রাম্বুটান দেখছেন কৃষি উদ্যোক্তা ও চিকিৎসক ডা. আকেইপ্রু চৌধুরী

পাহাড়ের ঢালুজুড়ে সারি সারি গাছে রঙিন রাম্বুটান

নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়

২ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন দেশের অন্যতম ফ্রুট জোনে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের বনজঙ্গলে ঘেরা হাজার হাজার একর অনাবাদি পতিত পাহাড়ি টিলা ভূমিতে এখন গড়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফল-ফলাদির বাগান। বাগান ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান। পাহাড়ের অনুকূল আবহাওয়া, উপযোগী মাটির সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৃষি উদ্যোক্তারা নতুন নতুন ফলের আবাদ করছেন।

 

সাম্প্রতিক সময়ে রাম্বুটান নামে অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাদু ও দামি বিদেশি ফল পাহাড়ে নতুন করে আশার আলো জাগিয়েছে। সখের বশে করা এ বিদেশি ফলের অধিক উৎপাদন, বাজার মূল্য ও চাহিদার কারণে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন উদ্যাক্তারা। এসব সফল উদ্যোক্তাদের মধ্যে খাগড়াছড়ির মহালছড়ির চিকিৎসক ডা. আকেইপ্রু চৌধুরী অন্যতম। পাহাড়ের ঢালুজুড়ে গড়ে তোলা তার বাগানের সারি সারি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রঙিন রাম্বুটান ফল। পুরো বাগানে নজরকাড়া হলুদ এবং লাল রঙের ফলে ভরা। মহালছড়ি উপজেলা সদরের বিহার টিলা গ্রামে তার এ বাগানের অবস্থান। শখের বসে ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে রাম্বুটানের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির পাশের ঢালু ভূমিতে প্রাথমিকভাবে ২২০টি চারা রোপণ করেন কৃষি উদ্যোক্তা ও মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা.আকেইপ্রু চৌধুরী। তার বাগানজুড়ে এখন ফলভর্তি রাম্বুটান গাছ। প্রায় প্রতিটি গাছে ফল এসেছে। মহালছড়ির সবচেয়ে বড় এ বাগানে রয়েছে ৫ জাতের রাম্বুটান।

 

ডা. আকেইপ্রু চৌধুরী বলেন, আমি ২০২১ সালে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন ভ্রমণে যাই। সেখানে রাম্বুটান দেখে আমাদের দেশেও সেটি রোপণের স্বপ্ন দেখি। নিজে ফলটির চারা কিনে দেশে নিয়ে আসি। পরবর্তীতে কলম তৈরি করে নিজের বাগানে রোপণ করি। শখের বশেই শুরু করি। কিন্তু ভালো ফলন হওয়ায় আমি আশাবাদী হয়ে উঠি। এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাগান গড়ে তুলেছি। বাড়ির পাশে পতিত ঢালু জমিতে ইন্দোনেশিয়ান বিনজাই, থাইল্যান্ডের রংবিয়ান, ফিলিপাইনের কুইজন, মালয়েশিয়ান স্কুল বয় বা আনাক সেকুলা ও ইন্ডিয়ান জাতের এন-১৮ এর চারা রোপণ করি। এগুলো খুবই জনপ্রিয় জাত।

 

তিনি জানান, রোপণের মাত্র ৪ বছরের মাথায় ২২০ টি গাছের মধ্যে ১৮০টিতে পরিপূর্ণভাবে ফলন এসেছে। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য শখের বশে বাগান শুরু করেছিলাম। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকায় আরো প্রায় ১০ একর জমিতে রাম্বুটানের চারা রোপণ করেছি।

 

তিনি আরো বলেন, আমার বাগানে ৫টি বিদেশি জাতের রাম্বুটান রয়েছে, যা দেশের অন্য কোথাও নেই। রাম্বুটানের পরিচর্যা অন্যান্য ফলের তুলনায় কম। সার এবং কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন সেচ দিতে হয়। রাম্বুটানের বাজারমূল্যও বেশ। খোলা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রয় হয় ১৪শ টাকা। সুপারশপে প্রায় ২৪শ টাকা। যারা বেকার যুবক রয়েছে তারা রাম্বুটান চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন দায়িত্বপালনকারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আঁশযুক্ত, কম রসালো, সুস্বাদু ও সুঘ্রাণের বিদেশি ফল রাম্বুটান দেখতে অনেকটা লিচুর মত। এটি বেশ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। ভিটামিন এ, সিসহ বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলসে ভরপুর ফলটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ও আবহাওয়া খুবই উপযোগী রাম্বুটান চাষাবাদের জন্য।

 

খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মালেক বলেন, এখানে কৃষকরা রাম্বুটান চাষ করছে। বিদেশি জাতের পাশাপাশি আমাদের বারি রাম্বুটান-১ পাহাড়ের মাটিতে চাষের উপযোগী। রাম্বুটান চাষের জন্য যে মাটি ও পরিবেশ দরকার তা পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে। তিনি বলেন, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হর্টিকালচার ও কৃষি বিভাগ পাহাড়ের কৃষি উদ্যোক্তাদের সব সময় প্রযোজনীয় পরামর্শ ও উৎসাহ দিচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট