
অমাবস্যাজনিত জোয়ার ও কয়েকদিনের টানা বর্ষণে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় রাউজান উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রামের হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বসতঘর, রাস্তাঘাট, ধানের বীজতলা, মাছের পুকুর এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
হালদা ও কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে কোমর থেকে বুকসমান পানি জমে থাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগ। উপজেলার নোয়াপাড়া, উরকিরচর, পশ্চিম গুজরা, পূর্ব গুজরা, গহিরা, হলদিয়া, কদলপুর, বিনাজুরী, বাগোয়ান ও পাহাড়তলী ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হালদার তীরবর্তী নোয়াপাড়ার মোকামীপাড়া, কচুখাইন, সামমাহালদারপাড়া, দক্ষিণ ও পশ্চিম নোয়াপাড়া, ছামিদর কোয়াং এবং উরকিরচরের মইশকরম, সওদাগরপাড়া, সুজারপাড়া, খলিফার ঘোনা, বৈইজ্জাখালি এলাকা পানির নিচে চলে গেছে। এসব গ্রামে বহু মানুষ ঘরবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাটহাজারী অংশে বেড়িবাঁধ থাকলেও রাউজানের নদীপাড়ে সুরক্ষাবাঁধ নেই বলেই প্রতিবছর অমাবস্যা-পূর্ণিমায় এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ কারণে ছয় মাস পানিবন্দি থাকতে হয় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে। মোকামীপাড়ার মাছচাষি কাজী আশরাফ উদ্দিন বলেন, “জোয়ারের পানিতে প্রতি বছরই ঘের ভেসে যায়। এবারও ৪টি বড় পুকুরে চাষ করা মাছ পানিতে ভেসে গেছে, ক্ষতি ৫-৬ লাখ টাকার মতো।” কৃষক মো. ইসমাইল জানান, “১০ শতক জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম, কিন্তু সব পানিতে তলিয়ে গেছে।” পানির তোড়ে সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, অনেক জায়গায় হাঁটু থেকে বুকসমান পানি।
আবুল কাসেম হিরু নামে উরকিরচরের এক বাসিন্দা বলেন, “গত কয়েকদিনে রান্না পর্যন্ত করতে পারছে না অনেকে। ঘরেও পানি, বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই।” উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম কবির বলেন, পানি কমার পর কৃষি অফিস থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে ধান ও বীজতলার মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ জানান, নদীর পানি বেড়ে অনেক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সহায়তার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হবে। স্থানীয়দের মতে, গত কয়েক বছরের মধ্যে এমন পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি। হঠাৎ করেই হালদা ও কর্ণফুলীর পানির উচ্চতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্লাবনভূমিতে পরিণত হয়েছে রাউজান। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ