
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১০টা ২৫ মিনিটের ঘরে। মঙ্গলবার রাতের এই সময়ে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেন এসে পৌঁছায় লোহাগাড়ার চুনতি অভয়ারণ্য এলাকায়। হঠাৎ চালকের চোখে পড়ে রেললাইনে দাঁড়িয়ে আছে হাতির পাল।
চালক দ্রুত ব্রেক চেপে হাতির পাল যেখানে অবস্থান করছিল, তার ঠিক আগে গিয়ে থামিয়ে দেন ট্রেন। ট্রেনচালকের বিচক্ষণতায় শেষ পর্যন্ত রক্ষা পায় হাতির পাল। তবে ট্রেনের একটানা হুইসেলে ‘বিরক্ত’ হয়ে একটি হাতি ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিয়েছে।
কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী সৈকত এক্সপ্রেস ওই ট্রেনের ১৭টি বগিতে যাত্রী ছিল প্রায় ৫০০ জন। লোকোমাস্টার (ট্রেনচালক) ছিলেন আবদুল আউয়াল এবং গার্ড ছিলেন (পরিচালক) সাখাওয়াত হোসেন। শেষ বগিটি ছিল গার্ডের।
ট্রেনচালক আবদুল আউয়াল বলেন, রাত ৮টায় কক্সবাজার থেকে ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সৈকত এক্সপ্রেসের। কিন্তু ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে প্রায় ৫০ মিনিট দেরি হয়ে যায়। ট্রেন নিয়ে আসার পথে হারবাং-লোহাগাড়া সেকশনের চুনতি অভয়ারণ্যে রেললাইনের ওপর হাতির পাল চোখে পড়ে। ওই এলাকায় চার কিলোমিটার পথে ট্রেনের গতি থাকে ২০ কিলোমিটার।
তিনি বলেন, ধীরগতিতে চালানোর কারণে এবং ট্রেনের হেডলাইটের আলোতে রেলপথের ওপর হাতি দেখতে পাই। এতে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ি। তবে দেখার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক চাপতে থাকি। একপর্যায়ে জরুরি ব্রেকে চাপ দিই। এতে কাজ হয়। হাতি যেখানে অবস্থান করছিল, তার ঠিক আগে গিয়ে ট্রেন থামে। হাতির কোনো বিপদ না হওয়ায় স্বস্তি পাই।
আবদুল আউয়াল আরো বলেন, রেললাইন থেকে হাতি নেমে যাওয়ার ১-২ মিনিট পর ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন ফোন করে জানান, হাতি ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। দ্রুত ট্রেন চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করি।
ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন বলেন, হঠাৎ ট্রেন থেমে গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনচালক ফোন করে জানান, রেললাইনের ওপর হাতি আছে। তাই সতর্কতা হিসেবে বগির ডান পাশের দরজা বন্ধ করে দেই। এরপর বাম পাশের দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। হাতি ক্রমাগত দরজা ও বগিতে আঘাত করতে থাকে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। চালককে ফোন দিয়ে দ্রুত ট্রেন ছাড়তে বলি। অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি।
পূর্বকোণ/ইবনুর