চট্টগ্রাম সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

শক্তিশালী জামায়াতের ঘাঁটিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি
নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সিনিয়র সদস্যদের নিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপির বৈঠক

শক্তিশালী জামায়াতের ঘাঁটিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি

মোহাম্মদ আলী

২১ জুলাই, ২০২৫ | ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) আসন পুনরুদ্ধারে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আলহাজ আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া ও সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দীন দুই উপজেলা বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতে দুই দফা বৈঠক করেছেন। দুইটি বৈঠকের নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। চট্টগ্রাম শহরের একটি রেস্টুরেন্টে তিনদিনের ব্যবধানে দুই দফা বৈঠকে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে।

 

বিএনপি সূত্র জানায়, দেশের চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের সাথে বিএনপির একটা রাজনৈতিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে জামায়াতকে চাপে ফেলতে কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে বিএনপি। চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) আসনটি মূলত জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে এ আসনে জামায়াত প্রার্থী জয়লাভ করেন। বর্তমানে এ আসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এ অবস্থায় জামায়াত থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে তৎপর হয়ে ওঠেছে বিএনপি।

 

তারই অংশ হিসেবে দুই উপজেলা সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া বিএনপির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গত ১৭ জুলাই ও গতকাল ২০ জুলাই চট্টগ্রাম শহরের একটি রেস্টুরেন্টে দুই দফা ঐক্য প্রক্রিয়ার বৈঠক করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। এ দুই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ ইদ্রিস মিয়া, সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দীন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসহাব উদ্দিন চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাজমুল মোস্তফা আমিন, এস এম ছলিম উদ্দিন খোকন চৌধুরী, সাজ্জাদুর রহমান, রফিকুল আলম, সালাউদ্দিন চৌধুরী সোহেল, শেফায়েত উল্লাহ চক্ষু ও ফৌজুল কবির ফজলু। মূলত বৈঠকে উপস্থিত থাকা সবাই দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। মাহবুবের রহমান শামীম, আলহাজ ইদ্রিস মিয়া ও লায়ন হেলাল উদ্দীন ছাড়া বাকি সবারই বাড়ি সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায়।

 

বিএনপির অপর এক সূত্র জানায়, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ দূরত্বের কারণে বিএনপি এ আসনে শক্তিশালী জামায়াতের বিপরীতে তেমন একটা সুযোগ করতে পারছে না। তাই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রথমেই দুই উপজেলার নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়ার কাজ করছেন। তারই অংশ হিসেবে এসব বৈঠক করা হয়েছে।

 

জানতে চাইলে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, বিএনপির দুই উপজেলার নেতৃত্বের মধ্যে কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি ছিল। এখন এসব অবসান ঘটিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। যাতে আগামীতে সবাই ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করবেন।

 

এ দিকে বৈঠক সম্পর্কে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দীন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এ বৈঠক করা হয়েছে। এখন সবাই ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। যাতে আগামীতে একসাথে কর্মসূচি পালন করা যায়। একসাথে আগামী নির্বাচনে দল যাকে প্রার্থী দিবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার সাথে কাজ করবেন।

 

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) সংসদীয় আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব রয়েছে। স্বাাধীনতা পর বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির প্রার্থী তিনবার করে জয়লাভ করেছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ তিনবার ও জাতীয় পার্টি জিতেছে দুইবার করে এবং একবার জয়লাভ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

 

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৭৩ সালে ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের এম সিদ্দিক। ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। ১৯৮৬ সালে ৭ মে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন জাতীয়পার্টির ইব্রাহিম বিন খলিল। এই নির্বাচনের তিন বছরের মধ্যে ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে জাতীয়পার্টির ইব্রাহিম বিন খলিল পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসনে ১৯৯১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন জামায়াতে ইসলামীর শাহজাহান চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম। একই বছর ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনেও জয়লাভ করেন বিএনপির কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম। এরপর ২০০১ সালে পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন জামায়াতে ইসলামীর আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী।

 

নবম সংসদ নির্বাচনেও জামায়াত এ আসনটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তবে সেবার দলটি তাদের প্রার্থী পরিবর্তন করে। ২০০৮ সালের এ নির্বাচনে জয়ী হন জামায়াতে আ ন ম শামসুল ইসলাম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তবে সেবার বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ নির্বাচনে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেব। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট