চট্টগ্রাম রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে পরীক্ষামূলক সি-ট্রাক চলাচল শুরু, উচ্ছ্বসিত দ্বীপবাসী
আধুনিক সি-ট্রাক সার্ভিস

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে পরীক্ষামূলক সি-ট্রাক চলাচল শুরু, উচ্ছ্বসিত দ্বীপবাসী

মহেশখালী সংবাদদাতা

১৮ এপ্রিল, ২০২৫ | ৭:০০ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো আধুনিক সি-ট্রাক সার্ভিস। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় নতুন এই যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে মহেশখালীর মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থায় যুক্ত হলো এক নতুন দিগন্ত। সি-ট্রাক ও পল্টুন আসার খবরে স্থানীয় বাসিন্দারা উচ্ছ্বসিত।

 

এদিন কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা সি-ট্রাকটি নির্ধারিত সময়েই মহেশখালী জেটি ঘাটে পৌঁছায়। উপস্থিত যাত্রীরা উচ্ছ্বাস আর আশার মিশ্র অনুভূতি নিয়ে নতুন এই অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেন।

 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মহেশখালীতে একটি নির্ভরযোগ্য ফেরি বা ট্রাক সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন দ্বীপবাসী। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে প্রতিদিন হাজারো মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা ও প্রশাসনিক প্রয়োজন মেটাতে যাতায়াত করেন। কিন্তু নৌপথে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবহনের অভাবে বরাবরই জনদুর্ভোগ ছিল তীব্র। বিশেষ করে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ছোট ট্রলার ও কাঠের নৌকায় যাতায়াত ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও জীবননাশের আশঙ্কাজনক।

 

গত বছর ৫ আগস্ট মহেশখালীতে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত আন্দোলনের পর সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর নড়েচড়ে বসে। এরপরই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সি-ট্রাক চালুর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়। পল্টুন স্থাপন, ঘাট উন্নয়ন এবং যাত্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পর অবশেষে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়।

 

সি-ট্রাক মূলত একটি মাঝারি আকারের, দ্রুতগামী ও সুরক্ষিত নৌযান, যা যাত্রী ও হালকা পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এতে আধুনিক আসন ব্যবস্থা, নিরাপত্তামূলক ফ্লোটেশন যন্ত্রপাতি এবং ভারী ঢেউ প্রতিরোধে সক্ষম প্রযুক্তি যুক্ত থাকে। সি-ট্রাক চালুর ফলে বিশেষ করে অসুস্থ, শিশু, নারীদের যাতায়াতে নতুন স্বস্তি আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

 

বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (পরিচালনা) এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, সি-ট্রাকটি আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে। যাত্রীসেবা, নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ শেষে খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করা হবে।

 

মহেশখালী উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এটি। আমরা চাই সেবা যেন সঠিকভাবে অব্যাহত থাকে এবং দালালমুক্ত, সুশৃঙ্খল নৌপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

 

এই রুটে সি-ট্রাক চলাচল চালু হলে শুধু যাত্রী নয়, পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরাও আরও আগ্রহী হয়ে দ্বীপে আসবেন। পর্যটন সম্ভাবনাও বাড়বে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় গতি আসবে, পাশাপাশি দুর্যোগকালে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ বাড়বে।

 

তবে কয়েকজন সচেতন নাগরিক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সঠিক তদারকি না থাকলে আবারও ঘাট ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি ভাড়া নির্ধারণ ও টিকিট ব্যবস্থা যেন জনবান্ধব হয়, সেই দিকেও নজর দিতে হবে। মহেশখালীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় দ্বীপে আধুনিক সি-ট্রাক চালু হওয়া নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে এই সম্ভাবনার পূর্ণ বাস্তবায়ন নির্ভর করবে এর রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ওপর। সি-ট্রাক যেন কেবল পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আটকে না থাকে—এই প্রত্যাশাই এখন দ্বীপবাসীর মুখে মুখে।

 

 

পূর্বকোণ/হুবাইব/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট