চট্টগ্রাম শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

নিরাপত্তা ও ছাড়ের বিশেষ আয়োজন

ঈদের ছুটিতে ৫ লক্ষাধিক পর্যটকের ঢল নামবে কক্সবাজারে

কক্সবাজার সংবাদদাতা

২৮ মার্চ, ২০২৫ | ৮:২১ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ এক মাসের রমজান শেষে, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজার আবার মুখরিত হতে যাচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায়। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এই ছুটিতে পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটবে, যা তাদের বিগত মাসের মন্দা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে। পর্যটকদের বরণে হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউসগুলো আকর্ষণীয় ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, রমজান মাসে পর্যটকশূন্য থাকলেও ঈদের ছুটিতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হতে পারে। ২৭ রোজার পর থেকেই বিভিন্ন হোটেলে হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পর্যটকদের আগমন শুরু হয়েছে। অনেক হোটেলে ১০-২০% হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পর্যটকেরা। হোটেল-মোটেলগুলো মেরামতের কাজ শেষ করে ঈদের মৌসুমের জন্য প্রস্তুত। হোটেল ও গেস্টহাউসগুলো আকর্ষণীয় ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। অনেক হোটেলে বুফে লাঞ্চ ও ডিনারের ব্যবস্থা রয়েছে। ঈদের ছুটিতে পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

রমজান মাসে পর্যটকশূন্য থাকায় হোটেল-মোটেলগুলো মেরামতের কাজ শেষ করে ঈদের মৌসুমের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শহরের হোটেল মোটেল জোন ঘুরে দেখা গেছে, আবাসিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে আকর্ষণীয় ছাড়ের সুযোগ রেখেছে। বিভিন্ন হোটেলে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ব্যবস্থা থাকছে।

 

হোটেল রামাদার ফ্রন্টের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন জানান, তাদের হোটেলে ইতোমধ্যে ৪০-৫০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। হোটেল রয়েল বিচ রিসোর্টের কর্মকর্তা মুজাহিদ জানান, তাদের হোটেলে ৩০-৪০ শতাংশ বুকিং হয়েছে এবং ঈদের ১-২ দিন আগে ৮০ শতাংশ বুকিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন রিলেটেড স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান এবং টোয়াক এর উপদেষ্টা এস,এম কিবরিয়া খান পূর্বকোণকে জানান, ঈদ ও ঈদের পরের দিনগুলোর জন্য বিভিন্ন হোটেলে ৩০-৫০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। তারা আশা করছেন, ঈদের ছুটিতে পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করবেন।

 

টোয়াকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম সাদেক লাভু হোটেল-মোটেল মালিকদের প্রতি অতিরিক্ত দাম না রেখে পর্যটকদের সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ঈদের সময় কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে পর্যটকদের হয়রানি করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

কলাতলী হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, “রমজানে ব্যবসা মন্দা স্বাভাবিক, তবে ঈদে কক্সবাজার আবারও মুখরিত হবে পর্যটকে।” সাগর, বালু ও উৎসবের মিশেলে ঈদের কক্সবাজারের প্রস্তুতি এখন পূর্ণগতিতে।

 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজান মাসে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে যায়। বিশেষ করে দিনের বেলা রোজার কারণে ভ্রমণে আগ্রহী হন না পর্যটকেরা। তবে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হলে কক্সবাজার আবারও ফিরে পাবে তার চিরচেনা কোলাহল। হোটেল ব্যবসায়ীরা আশাবাদী, এবারের ঈদে তারা ভালো ব্যবসা করতে পারবেন।

 

পর্যটকদের জন্য কক্সবাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছে। ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন (টোয়াক) ও ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর পক্ষ থেকে খাবারের হোটেলে ১০ শতাংশ এবং বিভিন্ন ট্যুর প্রোগ্রামে ৪০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গেছে।

 

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পর্যটন এলাকায় বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। কোনো হোটেল-রেস্টুরেন্ট অতিরিক্ত দাম নিলে বা পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটকদের জন্য সকল ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং যেকোনো ধরণের হয়রানি প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি থাকবে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এবারের ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য একটি নিরাপদ এবং আনন্দময় গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

 

 

পূর্বকোণ/এরফান/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট