চট্টগ্রাম বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

পিতার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে যান ১৫ বছর বয়সে, গুলিবিদ্ধ হন পায়ে

এরফান হোছাইন, কক্সবাজার

২৩ মার্চ, ২০২৫ | ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

সুবেদার মেজর আব্দুল মাবুদ চৌধুরীর (অব.) জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৫ মে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তিনি। পিতার নির্দেশে প্রশিক্ষণ নিতে কক্সবাজার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের আগরতলায় যান। সেখানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সীমান্ত অভিযানে অংশ নেন। এভাবে প্রায় ৫০ দিন প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জনের পর থার্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন তিনি।

 

যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আব্দুল মাবুদ জানান, প্রাথমিক প্রশিক্ষণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহনসহ নানা কৌশল শেখানো হতো। দুই সপ্তাহের বেশি প্রশিক্ষণের পর অস্ত্র ও গোলাবারুদ হাতে পেয়ে বিভিন্ন মিশনে পাঠানো হতো। তবে, খাবার সংকটের কারণে প্রায়ই ক্ষুধার্ত থাকতে হতো। সেসময় যুদ্ধের পরিকল্পনা করত সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী। তবে পরিকল্পনাগুলো স্বল্পমেয়াদি ছিল। কারণ যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে কেউই নিশ্চিত ছিল না। মিশনে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন, এমনকি আব্দুল মাবুদ নিজেও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার খবরটি যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা অনেকেই জানতেন না। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে এ খবর পৌঁছানোর পর তারা জানতে পারেন, দেশ শত্রুমুক্ত হয়েছে।

 

মাবুদ জানান, “স্থানীয় রাজাকাররা পাঞ্জাবি সেনাদের চেয়েও ভয়ংকর ছিল,” “আমাদের আঞ্চলিক ভাষা চিনে ফেললে সেনাবাহিনীকে খবর দিত।” এজন্য ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডাররা কিশোর যোদ্ধাদের নিজ এলাকা থেকে দূরে মোতায়েন করতেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, স্থানীয়রা যাতে মুক্তিযোদ্ধাদের চিনতে না পারে, সেজন্যই এমনটা করা হতো।

 

যুদ্ধক্ষেত্রের মজার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আব্দুল মাবুদ বলেন, গেরিলা কৌশলে মুখে-গায়ে কালি মেখে বা কাদা মেখে যখন পাকিস্তানি হানাদারদের সামনে যেতেন, তখন তারা ভয় পেত। তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এটাই ছিল গেরিলা যুদ্ধের অন্যতম কৌশল। পাকিস্তানি হানাদারদের বিভ্রান্ত করতে, মুখে-গায়ে কাদা-কালি মেখে, মাথায় পাতার ঝোপ পরে ছদ্মবেশ নিতেন তারা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে না থেকেও অনেকে ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের নেপথ্যের কারিগর, যাদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা ভূমিকায় অংশ নিয়েছিল এই যুদ্ধে। এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রে খাদ্যের অভাবে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

 

উল্লেখ্য যে, সুবেদার মেজর আবদুল মাবুদ (অব.) শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা নন, তিনি একজন নিবেদিত সমাজসেবকও। ১৯৯৬ সালে অবসর নেওয়ার পর ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত খুরুশ্কুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি এলাকার রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কারে অসামান্য অবদান রাখেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে খুরুশ্কুল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে নির্মিত হয় আধুনিক ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। খুরুশ্কুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় তিনি এই ইউনিয়নকে একটি আধুনিক মডেল ইউনিয়নে রূপান্তর করেন। তার এই অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৫-২০০৬ সালে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট