চট্টগ্রাম সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

‘মানিকছড়িতে দফায় দফায় যুদ্ধ হয় পাকবাহিনীর সঙ্গে’

নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়

২২ মার্চ, ২০২৫ | ১:০৪ অপরাহ্ণ

১৯৭১ সালে বয়স ছিল ১৮। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালেই ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদেরের নেতৃত্বে রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিফৌজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রথম ট্রেনিং নিই। মেজর জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে মুক্তিফৌজের এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি খোলা হয়। এটিই দেশে স্থাপিত মুক্তিফৌজের প্রথম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পাকিস্তানি বাহিনী মে মাসের ২ তারিখে রামগড় থানায় বোমা হামলা, বাজারে দোকান-পাটে আর্টিলারি, অগ্নিসংযোগসহ তাণ্ডব চালায়। শান্তি কমিটির লোকজনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রামগড় বাজারের উপকণ্ঠে আমাদের পৈত্রিক বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

 

রামগড় পতনের পর ভারতে আশ্রয় নিই সবাই। পরে সাবরুমের মহকুমা প্রশাসক, পুলিশ ও বিএসএফের সহযোগিতায় সাব্রুম থেকে হরিণা বাজার হয়ে হরিণা ইয়ুথ ক্যাম্পে যোগ দিই। সেখানে এক-দেড় মাস প্রশিক্ষণ শেষে আসামের লোহারবন নামক ট্রেনিং সেন্টারে ২ মাসের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করি। সেই সময় সাথে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকনাথ। লোহারবনে প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের পুনরায় ফেরত পাঠানো হয় হরিণা ক্যাম্পে। শুরু হয় কমান্ডারদের নির্দেশে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ। সীমন্তবর্তী বৈষ্ণবপুরেই আস্তানা ছিল। সেখান থেকে নির্দেশ পেয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতাম।

 

অপারেশন শেষে আবার ফিরে আসতাম বৈষ্ণবপুরের আস্তানায়। ডিসেম্বরের শুরুতে প্লাটুন কমান্ডার হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরার নেতৃত্বে ৩৪ জনের আমাদের গ্রুপ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এক রাতে ফেনী নদী পার হয়ে মানিকছড়ি যাই বিশেষ অপারেশনের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার সময় এক গ্রুপ পথ হারিয়ে অন্যত্র চলে যায়, যাদের কাছে ছিল বোমা। রেঞ্জার ছিল আমার গ্রুপের কাছে। খবর আসল পাঞ্জাবিরা আসছে, কালাচান দেববর্মণ এলএমজি দিয়ে আক্রমণ করে ৮ জন পাঞ্জাবি নিহত হয়। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত যুদ্ধ হয়। ২০০ এর বেশি পাকিস্তানি সেনা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে আমাদের। কিন্তু দূরদর্শিতায় প্রাণ নিয়ে ফিরে আসি সকলেই।

 

মানিকছড়িতে একাধিকবারই যুদ্ধ হয়েছে পাকবাহিনীর সাথে। এসব যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য গভীর বন-জঙ্গনে অবস্থান করতে হতো দিনরাত। এসময় বনের জংলী কলা, কলা গাছের বগলী কিংবা থোড় খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে হতো আমাদের। ক্যাপ্টেন এনাম, মাহফুজ, শওকতসহ অনেক সেনা অফিসারের নেতৃত্বেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। এন্টি ট্যাংক মাইন দিয়ে শত্রুদের গাড়ি ধ্বংস ও বিস্ফোরক দিয়ে ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার অপারেশনেও অংশ নিয়েছি।

 

৮ ডিসেম্বর বৈষ্ণব নামের একজন সাবরুমে খবর নিয়ে যায় যে, রামগড় থেকে পাক সেনারা চলে গেছে। কিন্তু লোকটাকে সন্দেহবশত ক্যাম্পে বন্দী করে রেখে তার দেওয়া খবরের সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে নিতাই নামে একজনকে কৃষক সাজিয়ে রামগড়ে পাঠানো হয়। পরে তিনি সাবরুমে ফিরে খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করলে ৩৪-৩৫ জনের মুক্তিযোদ্ধার একটি দল নিয়ে ভয়ে ভয়ে রামগড়ে প্রবেশ করে বাজার হতে সোনাইপুল পর্যন্ত মাটির রাস্তায় পাকিস্তানিদের পুঁতে রাখা মাইন খুঁজে বের করে নিষ্ক্রিয় করার কাজও করি।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট