১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিলেট জেলার দুর্গাপুর থেকে ডাউকি (তামাবিল) এবং জেলার পূর্বসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গঠিত ৫ নং সেক্টর পাক হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত হয়েছিল। কিন্তু এর আগ থেকেই সশস্ত্র পাকবাহিনীকে নানা বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলে পরাস্ত করতে শুরু করে মিত্রবাহিনী। যার ফলে পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়।
এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। হেড কোয়ার্টার ছিল বাঁশতলাতে। আটশ নিয়মিত সৈন্য এবং পাঁচ হাজার গেরিলার সমন্বয়ে এই সেক্টর গঠিত হয়। সুনামগঞ্জ ও ছাতকের অধিকাংশ জলাভূমি ছিল এই সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে এই তথ্য জানান। ওই সময়ে তিনি সিলেটের ছাতক থানার টুকুর বাজার ক্যাম্পে অবস্থান করেন বলে জানান। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। তাঁর নিজ বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার রাজাপুর গ্রামে।
১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বায়েজিদ বোস্তামী ক্যান্টনমেন্টে তিনি যোগদান করেন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেণ। তিনি বলেন আগের মত স্মরণশক্তি নেই। যতটুকু মনে পড়ে ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে ৩য় বেঙ্গলের ১১১ জন শহীদ হয়। ছাতক থানার টুকুর বাজারে আমাদের ক্যাম্প ছিল। সেখান থেকে বিভিন্ন অপারেশনে আমরা যেতাম।
১৯৭১ সালে ২ ডিসেম্বর রাত ১২টায় ২০ জনের একটি টিম নিয়ে আমরা টেংরা টিলা পাঞ্জাবি ক্যাম্পে হানা দিই। আমাদের হাতে ছিল রাশিয়ান এলএমজি, রাইফেল ও রাশিয়ান এসএলআর। দুইপক্ষের ফায়ারিং হয়। প্রায় ৩শ গুলি বিনিময় হয়। রাত তিনটায় হানাদার বাহিনী পিছনে হটে। আমাদের দুই সৈনিক আহত হয়। হানাদার বাহিনীর একজন মারা যায়। ওরা লাশ নিয়ে চলে যায়।
আরেকটি স্বরণীয় ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নভেম্বরে ১২ তারিখ সন্ধ্যায় ছাতক থানার আমবাড়িতে ১৫ জনের হানাদার বাহিনীর উপর আমরা হামলা করি। সেখানে ১ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ২ জন মুক্তিসেনা মারা যায়। সৈনিক রমিজ ও মমতাজ মিয়া সেদিন শহীদ হয়। তাদের তাজারক্ত এখনো আমার চোখে ভাসে।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি সাথে একটি গ্রেনেড রাখতাম। যদিও পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য এই গ্রেনেড কিছুই না। তারপরেও মনের মধ্যে সাহস যোগানোর জন্য সাথে রাখতাম। ৯ মাসের এই যুদ্ধে অনেক ঘটনাই মনে দাগ কাটে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আমরা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছি, তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে
পূর্বকোণ/ইব