চট্টগ্রাম সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

‘ফটিকছড়ি জুইগ্যার ছড়া খাল না থাকলে কেউই বাঁচতাম না’

হাছান মাহমুদ সুজন, কুতুবদিয়া

১৭ মার্চ, ২০২৫ | ১২:০২ অপরাহ্ণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা ভোলা নাথ মহেশখালী সদর বড়ঘোপ ইউনিয়নের জেলেপাড়ার বাসিন্দা। মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, তখন ব্যবসায়িক কাজে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে থাকতাম। চতুর্দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে পাকবাহিনী বাঙালিদের উপর তাণ্ডব চালাচ্ছে। গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। গান পাউডার ছিটিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে।

 

আমার নিজ গ্রামেও একই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সেসময় পাকিস্তানিরা কুতুবদিয়ায় তিনজনকে হত্যা করে। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে স্টিমারঘাটের পাশে কোমর পরিমাণ পানিতে নামিয়ে সূদন দাশ নামে একজনকে গুলি করে মেরেছিল। একই এলাকায় ঘরে বন্দী করে এক নারীকে আগুনে পুড়িয়েছে। এছাড়া কৈয়ারবিলের সাগরপাড় এলাকায় একজনকে গুলি করে হত্যা করে।

 

সময় যত গড়ায় ততই বাড়ছিল জীবনের ঝুঁকি। তখন পরিবার থেকে বার বার চাপ দিচ্ছিল নিজেকে বাঁচানোর পথ খোঁজার জন্য। একপর্যায়ে কুতুবদিয়া থেকে আমরা তিনজন- আমি, আমার মামা মং মোহন ও কৈয়ারবিলের আব্দুল গফুর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমাদের কমান্ডার ছিল বাঁশখালীর মোক্তার আহমেদ। ভারতের পালাটোনা ক্যাম্প থেকে দেড় মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা প্রায় এক হাজার ৮শ বাঙালি সাবরুম সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরছিলাম। বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশের পরপরই পাকবাহিনী পাহাড়ের বাঙ্কার থেকে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়; গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

 

তাদেরকে মোকাবেলা করে সামনে অগ্রসর হতে না পেরে সেখানে অজ্ঞাত একটি পাহাড়ে রাত কাটিয়েছি। পরদিন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নানুপুর স্কুলে এসে অবস্থান নেই। সেখানে বিশ্রামের একদিন পর হঠাৎ করে সকালে কমান্ডার সংকেত দেন। প্রথম সংকেতের সাথে সাথে আমরা যার যার অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিলাম। দ্বিতীয় সংকেতে সবাই লাইনে সারিবদ্ধ হই। আমার কাঁধে ছিল রাইফেল; কোমরে প্রায় আড়াই শ গুলি।

 

পাকবাহিনী আমাদের মারার জন্য চতুর্দিকে ঘেরাও করে রাখে। তৃতীয় সংকেতে আমরা তাদের মোকাবেলা করার জন্য সামনে এগোচ্ছিলাম। ফটিকছড়ি জুইগ্যার ছড়া খাল বরাবর যেতে না যেতেই পাকিস্তানি বাহিনী ভারী অস্ত্রের গুলি ছোড়ার কারণে আমরা আর সামনে অগ্রসর হতে পারিনি। তখন আমরা ১০ সদস্যবিশিষ্ট দলে বিভক্ত হয়েছিলাম। খালটি না থাকলে আমরা কেউ বাঁচতাম না। সবাই খালে লুকিয়ে কৌশলে মোকাবেলা করেছি।

 

রাইফেল, এলএমজি ছাড়া তখন আমাদের তেমন ভারী অস্ত্র ছিল না। ওইদিন সকাল থেকে গোলাগুলি, দুপুরের দিকে পাকবাহিনী পিছু হটে। সেখান থেকে এসে একরাত চট্টগ্রামে ছিলাম। পরে বাঁশখালীর জলদি এসে কমান্ডারকে অস্ত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফিরে যাই।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট