কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের তিন বারের সাবেক চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট এম কামাল হোসেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, এক নম্বর সেক্টরের কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের নেতৃত্বে আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি ও চকরিয়া হাইস্কুল মাঠে প্রশিক্ষণ নিই। তখন আমি সাতকানিয়া উপজেলার বারদোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। আমি মূলত সাতকানিয়া থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ শুরু করি। ৩০- ৪০ জন আমরা একেক গ্রুপ হয়ে একেক এলাকায় স্থান পরিবর্তন করে হানাদার বাহিনীর সাথে ও কৌশলে পাল্টা আক্রমণ করতে শুরু করি।
২৭ এপ্রিল হানাদার বাহিনী চকরিয়া দখলে নেয় এবং ৩০ এপ্রিল কক্সবাজার দখলে নেয়। তখন আমরা পশ্চিম বড় ভেওলার চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বি.এ’র নেতৃত্বে চকরিয়া ব্রিজ এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করি। এপ্রিল মাসের শুরুতে পেকুয়া নাপিতখালী এলাকায় আক্রমণ করলে হয়ত মারাও যেতাম, কঠিন বিপদ থেকে সেদিন ওদের হাত থেকে বেঁচে যাই। তবে সেদিন কেউ হতাহত হয়নি।
৩ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানবাহিনীর সদস্যরা কক্সবাজার মহকুমার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মঈদুর রহমান চৌধুরীকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে গুলি করলে সাথে সাথে তিনি মারা যান, সাথে নজির নামের এক ব্যক্তিকেও হত্যা করা হয়। চারিদিকে যুদ্ধ চলছে। এভাবে একেক দিন একেক এলাকায় যুদ্ধ করি, আস্তে আস্তে হানাদাররা পিছু হটতে থাকে। হানাদার মুক্ত হয় কক্সবাজার। ১৪ ডিসেম্বর পেকুয়ার পশ্চিম গোয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৎকালীন এমপি মরহুম এডভোকেট জহিরুল ইসলামের সাথে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি। পরে নুরুল আজিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট এম. কামাল হোসেন ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন পেকুয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন। এরপর তিনি শিক্ষাগত পেশা শুরু করেন। প্রথমে পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউশন ও পরে সাতকানিয়া বারদোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি এলএলবি পাস করে শিক্ষকতা পেশা বাদ দিয়ে সফলতার সাথে ১৯৮২ সাল থেকে আইনি পেশায় জড়িয়ে দীর্ঘ ৪৪ ওকালতি করেন।
পূর্বকোণ/ইব