নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন খাল, ঝিরি ও নদ-নদী থেকে অবাধে চলছে বালি উত্তোলন। এতে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নীরব থাকছে প্রশাসন। অবাধে বালি উত্তোলনের ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।
জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে লাখ লাখ ফুট বালি উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। কোনো রকম সরকারি ইজারা ছাড়াই চলছে বালি তোলার মহোৎসব। অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধে বাধা দেওয়ায় অনেককে হত্যার হুমকিও দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চক্রটির বিরুদ্ধে। অভিযোগে জানা যায়, বালি খেকোরা নদীর মাটি পাশের রামু উপজেলার ঈদগড়ের ইটভাটায় চড়া দামে বিক্রি করছে। এছাড়া বালি দিয়ে উপজেলার ৫ ইউনিয়নে শত শত একর ফসলি জমি ভরাট করা হচ্ছে। এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ ও অবকাঠামো নির্মাণ কাজে বালি খেকোরা চড়া দামে বিক্রি করে আসছে।
বাইশারী ইউনিয়নের ছড়া খালে ৪-৫টি ড্রেজার মেশিন ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন চলছে। উত্তোলিত এসব বালি বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমির ওপর স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। ড্রেজার, শ্যালো মেশিনের সাথে বড় বড় পাইপ সংযুক্ত করে অনেক দূর পর্যন্তও এই বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছড়া খাল থেকে আগ্রাসীভাবে বালি উত্তোলনের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ও চাষাবাদ ব্যাহত হওয়াসহ বহুমুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একজোট হয়ে ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলন করে আসছে বিশাল একটি চক্র। এতে পানির প্রবাহে গতি পরিবর্তনসহ নদীর পাড় ভেঙে এলাকার ফসলি জমিসহ বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হওয়ার পথে।
স্থানীয়রা জানান, বালি উত্তোলনের সঙ্গে একটি প্রভাবশালী চক্র জড়িত। যদিও বালি উত্তোলনের জন্য তাদের কাছে কোনো ধরনের অনুমতি নেই। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাইশারীর কেঙ্গার বিল, হলুদিশিয়া, হরিণখাইয়া, নারিচবুনিয়া, কাগুজি খোলা এলাকার ছড়া খাল, নাইক্ষ্যংছড়ি খাল, ঝিরি ও পাহাড়ি ছড়া থেকে নির্বিচারে বালি উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহল।
এছাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি, কম্বনিয়া, চাকঢালা, আশারতলী ও জামছড়ি এলাকার নাইক্ষ্যংছড়ি খাল থেকেও বালি উত্তোলন করছে দেদারসে। বালি তোলা হচ্ছে সীমান্ত ইউনিয়ন ঘুমধুমের বাইশফাঁড়ি, তুমব্রু খালে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কাগজি খোলা ও লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের লামার পাড়ার মাঝখানে দুই উপজেলার সীমানায় খুটাখালীর ছড়াখাল। ঐ ছড়াখাল থেকে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের নেতৃত্বে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে।
অপরদিকে ঐ ছড়া খালে বালি খেকোরা মাটির বাঁধ দিয়ে খালের গতি পরিবর্তন করে নাইক্ষ্যংছড়ির বিশাল একটি অংশ লামা উপজেলায় নিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাল্টে যাচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মানচিত্র। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাইশারী ইউনিয়নের কাগজি খোলা গ্রামের জুহুরা পারভীন, কামাল হোসন, আব্দু শুক্কুর, আমির মোহাম্মদ বাদী হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ইউএনও বরাবর পৃথকভাবে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি বলে সাংবাদিকদের জানান।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের লামার পাড়া গ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ৫ ভাই মিলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কাগজি খোলা খুড়াখালী ছড়াখালের কয়েকটি স্থানে ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবাধে বালি তুলছে। শুধু তাই নয়, নদীর তীর থেকে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে আশপাশের ইট ভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করছে এই সিন্ডিকেট। এতে নদীর তীরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালি উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানের পাড় ধসের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যে কোনও সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঐ এলাকার মো. ইউনুছ প্রকাশ কেড়া ইউনুছসহ নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, প্রভাবশালীরা মাটি ও বালি ব্যবসায়ীদের অনুরোধ সত্তে¡ও বালি ও মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও তারা দিন-রাত ট্রাক ও ডাম্পার গাড়িযোগে মাটি ও বালি পরিবহন করায় গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আবার বালি তোলার কারণে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর হুমকির মুখে পড়েছে। আগামী দু’এক বছরের মধ্যে নদীর পাশের ফসলি জমি, ভিটে ও বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে সচেতন মহল অভিযোগে জানান।
বালি উত্তোলনকারী শফিউল আলম পুতু জানান, নদী তীরবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা কিনে সেখান থেকে বালি ও মাটি বিক্রি করছেন তিনি।
তবে স্থানীয়রা জানান, তারা চারটি জায়গায় বোরিং করে বালি উত্তোলন করেন। বর্তমানে তা চলমান রয়েছে। দুই উপজেলার সীমান্তের এ ছড়াখালের বেশ কয়েকটি স্থান থেকে মেশিনে বালি উত্তোলন হচ্ছে। কারা, কীভাবে, কাকে ম্যানেজ করে এই বালি উত্তোলন করছে তা স্থানীয়দের জানা নেই। এছাড়া রামুর গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়ার ও নাইক্ষ্যংছড়ির একটি বালি উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট নাইক্ষ্যংছড়ির মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার আশারতলী, জামছড়ি, চাকঢালা, কম্বনিয়ার নাইক্ষ্যংছড়ি খাল থকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করছে।
পূর্বকোণ/ইব