চট্টগ্রাম সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

‘রাজকীয়’ বিদায় স্কুলদপ্তরির

জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়

সাদমান রহমান সময়, মিরসরাই

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১২:১৯ অপরাহ্ণ

এ যেন রূপকথার কোনো রাজ্যের রাজা। পায়ে জুতো গায়ে শেরওয়ানি মাথায় পাগড়ি পরিধান করে ঘোড়ার গাড়িতে চেপে ঢোল তবলার বাজনায় ঘুরছেন রাজ্যের হাট বাজার। তবে তিনি বাস্তবে রাজা নন, মফস্বল জনপদের একটি শর্তবর্ষী বিদ্যালয়ের দপ্তরি। যার ঘণ্টার আওয়াজে যুগের পর যুগ শিক্ষার্থীরা ক্লাস রুমে ঢুকতেন, ছুটির ঘণ্টায় বের হতেন হাজারো শিক্ষার্থী।

 

মফস্বল জনপদের ঐতিহ্যবাহী জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরি নুরুল আবছার। যেখানে কেটেছে তার জীবনের অর্ধশত বছর। আজ বাজিয়েছেন তিনি বিদায়ের শেষ ঘণ্টা। কারণ এখানে আজ তার শেষ কর্ম দিবস। জানা গেছে, নুরুল আবছারের ৪ প্রজন্মের কর্ম এটি। তার বাবা মুন্সি মিয়া, তার আগে তার দাদা ছেরাদুল হক, দাদার বাবা বাদশা মিয়া এই বিদ্যালয়ে দপ্তরি হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭৫ সালে তিনি তার বাবার সাথে এই বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতেন। তখন শুরু করেন কাজ। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন বিদ্যালয়ে।

 

উত্তর চট্টগ্রামের কোনো উপজেলায় এই প্রথমবারের মতো কোনো ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীকে রাজকীয় বিদায় জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীরা। কর্মজীবনের এটাই হয়তো দপ্তরি নুরুল আবছারের বড় প্রাপ্তি। গতকাল শেষবারের মতো ঘণ্টা বাজানোর পর বিদ্যালয়ের স্কাউটস দল তাকে বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতায় স্যালুট জানিয়ে সম্মান জানান।

 

পরবর্তীতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজনে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের নিচতলা থেকে দোতলায় কোলে করে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। এসময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিতাই দাশের সঞ্চালনায় জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবদুল হাইসহ শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।

 

এরপর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তার হাতে ফুলের তোড়া, সম্মাননা ক্রেস্ট ও নানা রকম উপহার তুলে দেন। এতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন দপ্তরি নুরুল আবছার। মায়া, মমতা ভালোবাসা আর আন্তরিকতায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বিদায় অনুষ্ঠান হয়ে ওঠলো রাজকীয়। এ যেন এক বিরল দৃষ্টান্ত।

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম বলেন, একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বিদায়ও ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার আবরণে রাজকীয় হতে পারে। তা তার নিজ কর্মগুণেই তিনি অর্জন করেছেন। সমাজের জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সেই নুরুল আবছাররা আজীবন বেঁচে থাকুক আমাদের সমাজে। একজন মানুষ ৫০টি বছর এই প্রতিষ্ঠানের জন্য শ্রম দিয়েছেন। তা চাট্টিখানি কথা নয়। এই বিদ্যালয় যতদিন থাকবে ততদিন নুরুল আবছারের কর্মকে স্মরণ করবে জোরারগঞ্জবাসী।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট