আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় মৌসুমের শুরু থেকে লাগাতার লবণ উৎপাদন হচ্ছে। তারপরও প্রান্তিক চাষিদের মুখে হাসি নেই। বাজারে লবণের মূল্য কম থাকায় কোনো রকম উৎপাদন খরচও পাচ্ছে না চাষিরা। গত মৌসুমে মাঠপর্যায়ে প্রতি মণ লবণ ৩৯০-৪২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকা। সিজনজুড়ে এভাবে মূল্য স্থির থাকলে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পারেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, কুতুবদিয়ায় প্রায় ৭ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। ’২৪ এর ১৫ নভেম্বর থেকে ’২৫ এর ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলতি মৌসুমের এ ছয় মাসে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৬৯ হাজার একর জমিতে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে কুতুবদিয়ায় মৌসুমের প্রথম লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। কাজেই আলাদা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা না হলেও লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলটি এগিয়ে থাকবে বলে জানান সূত্রটি। লবণ চাষাবাদের হালচাল জানতে সরেজমিনে দ্বীপের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন চাষির শরণাগত হন পূর্বকোণের এ প্রতিবেদক। অশ্রু টলমলে চোখ আর ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে চাষিরা জানান, জমির ইজারা মূল্য (এলাকাভেদে) ৭০ হাজার টাকা, পানি সেচ ১৮ হাজার টাকা, মাঠ প্রস্তুতের সময় শ্রমিক খরচ ৩-৪ হাজার, পলিথিন খরচ ৮ হাজার টাকা, প্রতি মাসে শ্রমিক খরচ ৩০ হাজার টাকাসহ এলাকাভেদে প্রতি কানিতে (৪০ শতক) মোট খরচ গুনতে হয় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অপর দিকে মৌসুমজুড়ে প্রতি কানিতে লবণ উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ ৩৫০-৪০০ মণ। বর্তমান বাজার দর ২২০ টাকা অনুযায়ী হিসেব করলে ৪’শ মণের মূল্য দাঁড়ায় ৮৮ হাজার টাকা। যেখানে মৌসুমের শুরু থেকে উৎপাদন খরচ আর মৌসুমজুড়ে উৎপাদিত লবণ বিক্রয় মূল্যের সাথে অনেক ফারাক রয়েছে।
চাষিরা বলছেন, গত মৌসুমে জমির ইজারা বা লাগিয়ত মূল্য ও উৎপাদন খরচ বাড়লেও উৎপাদিত লবণের মূল্য এতোটা কমেনি। অধিক লাভের আশায় আগেভাগে মাঠে নামলেও চলতি মৌসুমের শুরু থেকে লবণের ন্যায্য দাম নেই। সামনে দাম না বাড়লে নিজেদের শ্রম এবং উৎপাদন খরচ উঠে আসবে না। লোকসান গুনতে হবে প্রায় লাখ লাখ টাকা। পাশাপাশি বাপ-দাদার পুরোনো পেশা লবণ চাষের প্রতি আগ্রহ হারাবে- এমন মন্তব্য করেন অনেক চাষি। কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া পূর্বকোণকে জানান, চলতি মৌসুম শুরুর আগেভাগেই চাষিরা লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমে আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গেল মৌসুমের মতো এবারও রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হবে।
তিনি আরো জানান, লবণ শিল্পকে বাঁচাতে গেল সপ্তাহে জেলায় শিল্প উপদেষ্টা মহোদয়ের উপস্থিতিতে জরুরি সভা হয়েছে। যেখানে লবণ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত পলিথিনের দাম কমানো এবং লবণের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে দাম কম থাকলেও চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
পূর্বকোণ/পিআর