আমেরিকার সুস্বাদু ফল তিশা চাষ হচ্ছে খাগড়াছড়ির রামগড় পাহাড় অঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বাগানে। বাগানের গাছগুলোতে প্রচুর ফুল ও ফল ধরেছে। ফলন শুরু হলে বছরের ১২ মাসই ফুল ও ফল ধরে। কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা দাবি করেন, বাংলাদেশে একমাত্র রামগড় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বাগানেই সর্ব প্রথম এ ভিনদেশি ফল তিশা চাষে সফলতা আসে। ডিমের মত দেখতে বলে তিশা ফলকে এগ ফ্রুট বা ডিম ফলও বলা হয়। শুধু দেখতে নয়, পাকা ফল খেতে অনেকটা চিনি মেশানো সিদ্ধ ডিমের কুসুমের স্বাদের। পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছ ১০ হতে ১৫ মিটার লম্বা হয়। ফল গোলাকার ও ডিম্বাকার এ দু ধরনেরই হয়। কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ এবং পাকলে ফলের রং হয় গাঢ় সোনালী থেকে কমলা। ফলের ওজন হয় গড়ে ১২৫ গ্রাম। সফেদা পরিবারের তিশা ফলটি মূলত: দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় উৎপাদন হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এখানে তিশা’র ৫টি চারা গাছ রোপন করা হয়। ২০০৯ সালে ২/১টি গাছে কিছু কিছু ফুল ও ফল আসে। এরপর থেকে গাছগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে পরিচর্যা করা হয়। পরবর্তীতে সবগুলো গাছেই আশানুরূপ ফুল ও ফল ধরতে শুরু করে। গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে গবেষণা কেন্দ্রের বিভিন্ন ব্লকে রোপন করা হয়।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, রামগড় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের টাওয়ার টিলার বাগানের গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। গাছের এক ঢালে ফুল, অন্য ঢালে ঝুলছে তিশা ফল। সারা বছরই ফুল ও ফল ধরে। ঐ ব্লকে আরও অনেকগুলো চারা রোপন করা হয়েছে। টাওয়ার টিলা ছাড়াও আনসার ক্যাম্প টিলা ও আবাসিক ব্লকেও তিশার বাগান রয়েছে। রামগড়ে দীর্ঘদিন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালনকারী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মর্কতা (অব.) ড. জুলফিকার আলী ফিরোজ বলেন, তাঁর উদ্যোগেই ২০০২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এখানে তিশা’র চারাগাছ রোপন করা হয়। তাঁর গবেষণা ও পরিচর্যায় বাংলাদেশের মধ্যে রামগড়েই সর্বপ্রথম এ তিশা উৎপাদনে সফলতা আসে।
ড. জুলফিকার আরও জানান, ‘পাহাড়ের আবহাওয়া ও মাটি তিশা ফল চাষের জন্য যে উপযোগী তা গবেষণায় নিশ্চিত হয়েছি।’ তিনি বলেন, তার সফলতার পর রামগড় গবেষণা কেন্দ্র হতে চারা সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টার ও রাঙামাটির রাইখালি গবেষণা কেন্দ্রে রোপন করা হয়। সেখানেও সফলতা আসে। তিনি জানান, খাদ্যপ্রাণ ও ওষুধিগুণ থাকায় বিভিন্ন দেশে তিশা ফল ওষুধি ফল হিসাবেও পরিচিত।
রামগড় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র হতে সদ্য বদলি হওয়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. সেলিম জানান, বারি তিশা-১ নামে জাত অবমুক্তির জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগের মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বীজ বোর্ডের অনুমোদন পেলে বারি তিশা-১ নামে দেশে এ ফল চাষের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
পূর্বকোণ/পিআর