মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংড়ু থেকে দীর্ঘ এক মাস পর ৩৫০ বস্তা ফেলন ডাল নিয়ে একটি ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে এসেছে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে মালামাল খালাস করা শুরু হয়। ডালগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হবে। এর আগে ডিসেম্বরে আরও এক হাজার ৫৬০ বস্তা ফেলন ডাল এসেছিল।
ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমার থেকে সর্বশেষ ৩ ডিসেম্বর পণ্যবাহী জাহাজ এসেছিল। গত ৮ ডিসেম্বর নাফ নদীর ওপারে মংড়ু শহর দখলে নেয় আরাকান আর্মি। মূলত তাদের প্রতিবন্ধকতার কারণেই এরপর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে রাখাইনের রাজধানী সিটওয়ে (পূর্বনাম আকিয়াব) থেকে কোনও পণ্যবাহী ট্রলার আসেনি।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, মালামালের আমদানির জন্য আমাদের অগ্রিম টাকা সে দেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ব্যবসা বন্ধের কারণে মালামাল আসছে না। এতে আমার মতো অনেক ব্যবসায়ী লোকসানে পড়েছেন। রাখাইনে যুদ্ধের কারণে অনেক দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ আছে। অন্যদিকে অনেক লোকজন কর্মহীন দিন কাটাচ্ছেন।
স্থলবন্দরের কাস্টমসের তথ্য মতে, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় স্থলবন্দরে রাজস্ব আয়ে ভাটা পড়েছে। যেখানে আগে টেকনাফ বন্দরে মাসে অন্তত ২০০ ইঞ্জিনচালিত বড় বোটে পণ্য আনা-নেওয়া হতো তা এখন শূন্য কোটায় বলা চলে। এতে গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে টেকনাফ বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। তাই স্বাভাবিক সময়ে ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও সেখানে ডিসেম্বরে আয় হয়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকা। রাখাইনে যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের তুলনায় ১৭০ কোটি টাকার কম রাজস্ব আয় হয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তা এম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, টেকনাফ সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মি দখলের পরে মূলত এ বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ আসেনি। কারণ আরাকান আর্মিরা বাধা দিচ্ছে। সেজন্য পণ্য জাহাজ আসতে পারছে না। তবে সরকার সে দেশের দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা করছে, যাতে সীমান্তের বাণিজ্যে স্বাভাবিক হয়। রবিবার সন্ধ্যায় ডালবাহী একটি ট্রলার এসেছে।
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এমন স্থবির পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় শনিবার (১১ জানুয়ারি) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গেছেন সরকারের বাণিজ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এইচএম শফিকুজ্জামান। তিনি বন্দর পরিদর্শন ছাড়াও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সংকট নিরসনে আলোচনা করেন।
টেকনাফ স্থলবন্দর ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, রবিবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মংড়ু টাউনশিপ থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুস শুক্কুরের কাছে ৩৫০ বস্তা ফেলন ডাল নিয়ে একটি ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিতে এসে নোঙর করে। মিয়ানমার থেকে সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ এসেছিল। গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যে মংড়ু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলে নেওয়ার পর থেকে কোনো পণ্যেবাহী জাহাজ বন্দরে আসেনি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের প্রভাব পড়েছে দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্যে। টেকনাফ স্থলবন্দরে স্থবির হয়ে পড়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। সীমান্ত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও ভাটা পড়েছে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগের মত আমদানি-রপ্তানি বাড়বে।
পূর্বকোণ/কাশেম/জেইউ/পারভেজ